চারদিক সবুজ অরণ্য, মাঝখানে সোনালী রঙে মোড়ানো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে দুই শতাধিক গম্বুজ। দেখলে মনে হবে, প্রকৃতি গহনা পরে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয়জনের অপেক্ষায়। বলছিলাম টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদের কথা। সেই মসজিদের পাশেই এবার নির্মাণ হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিনার, যার নাম হবে ‘রফিকুল ইসলাম টাওয়ার’।
মিনারটি উচ্চতা হবে ৫৭তলা ভবনের সমান বা ৪৫১ ফুট। এই মিনারের ৫০তলা পর্যন্ত থাকবে লিফট সুবিধা। নির্মাণ শেষ হলে দিল্লির ২৪০ ফুট উঁচু কুতুব মিনারকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিনার হবে এটি। এখান থেকেই আযান দেওয়া হবে। এদিকে মসজিদের কাজও প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ও শুরু হয়েছে। মসজিদটি এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। বিশেষ করে শুক্রবারে এই মসজিদে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বাকি কাজ শেষ করতে সবার সহযোগিতা কামনা করছেন নির্মাতারা।
মসজিদের উত্তর দিকে অজুখানা। বিশাল আয়তনের অজুখানায় বসে অজু করার জন্য ছোট ছোট চেয়ারের মতো ১১৬টি আসন রয়েছে। অজুখানার ছাদ ধূসর রঙের ক্ষুদ্রকায় পাথরের মতো মোজাইক করা। তাতে মধ্যম গভীর পানির আঁধার। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অজুখানাটি সামান্য আঁকাবাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। দ্বিতল এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে মিশর থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের টাইলস।
দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির ছাদের মূল গম্বুজের উচ্চতা ৮১ ফুট। এই গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ১৭ ফুট উচ্চতার আরও ২০০ গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ১০১ ফুট উঁচু চারটি মিনার। এছাড়াও ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজ আর মিনারগুলোতে দৃষ্টিনন্দন উন্নত মানের টাইলস লাগানো হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বিনামূল্যে হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদের পাশেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান। মসজিদের সামনে রয়েছে কয়েকটি দোকান। খাবার হোটেলসহ আরও আছে শো পিস, আচার, খেলনাসহ বেশ কিছু পণ্যের দোকান।
পাশেই রয়েছে ছোটদের জন্য ট্রেন, নাগরদোলা, নৌকা দোলনি ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা। মসজিদের আধা-কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাড। এছাড়াও মসজিদ ঘিরে আশেপাশে ফাইভ স্টার হোটেল ও আবাসিক হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মসজিদে ঘুরতে আসা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া লামিয়া বলে, আমার বাবা-মার সাথে মসজিদে এসেছি। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। মার সাথে নামাজ আদায় করে ট্রেনে ও দোলনায় উঠেছি। এরপর আবার আসবো।
বগুড়া থেকে আসা দর্শনার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, ইন্টারনেটে যা দেখে এসেছিলাম, তার চেয়ে আরও বেশি কিছু দেখতে পেয়েছি। সারাটা দিন আমার খুব ভালো কাটছে।
গাজীপুর থেকে আসা কলেজ শিক্ষক আকবর আলী খান বলেন, আমার এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ২০১ গম্বুজ মসজিদটি দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো। এরপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে যাবো।
জামালপুর থেকে আসা আনিছুর রহমান বলেন, ফেসবুকে ছবি দেখে মসজিদটি দেখার সিদ্ধান্ত নেই। জুমার নামাজ আদায়ের আগে মসজিদের চার পাশ, নিচে-উপরে ঘুরে দেখেছি। সব দেখার পর খুবই ভালো লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, মসজিদের কারণে এলাকার রাস্তাঘাটসহ সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে। শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রামটি দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ চিনতে পারছে।
মসজিদের তত্তাবধায়ক হুমায়ন কবির বলেন, মসজিদের কাজ মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নিজ অর্থায়নে শুরু করলেও বর্তমানে সবার সহযোগিতায় করা হচ্ছে। মসজিদের বাকি কাজটুকুও সবার সহযোগিতায় করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে মসজিদের কাজ অনেক পিছিয়ে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্মাণ কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হবে। এছাড়াও সৌদি আরবের কাবা শরীফের ইমামকে দিয়ে জুমার নামাজ পড়ানোর মধ্য দিয়ে মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে মসজিদের নির্মাতা ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বিশ্বের সব মসজিদের চেয়ে এর কারুকাজ একটু অন্যরকম। নির্মাণকাজ শেষ হলে কাবা শরীফের ইমাম এসে নামাজে ইমামতি করে এর উদ্বোধন করবেন।
নির্মাতাদের প্রত্যাশা, এ স্থাপনাটি বিশ্বের দরবারে মসজিদের গ্রাম পাথালিয়া ও বাংলাদেশকে নতুন করে তুলে ধরবে। এটি পরিদর্শন করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটবে।
সূথ্য: রাইজিং বিডি
Leave a Reply