বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটর এবং টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানির দ্বন্দ্বের অবসান ঘটল। বিটিআরসির হস্তক্ষেপে টাওয়ার স্থাপনে সহযোগিতা না করার অনড় অবস্থান থেকে সরে আসে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি বিটিআরসির সঙ্গে এক সভায় নিয়ম অনুযায়ী টাওয়ার স্থাপনে অঙ্গীকার করে মোবাইল অপারেটর ও টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানিগুলো।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, টাওয়ার স্থাপনে গড়িমসি ছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে টাওয়ার কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে ১০০ করে টাওয়ার স্থাপন করতে রাজি হয়েছে। তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করা হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সেবা পাবেন অনায়াসেই।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সেবা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক অধিকার। কারণ তারা অর্থের বিনিময়ে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে সেবা কিনে নেন। কিন্তু গ্রাহকের অনুপাতে টাওয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন গ্রাহকরা। আমরা টাওয়ার স্থাপন কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি একটা সভা করেছি। সেখানে সংশ্লিষ্টরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখন থেকে প্রতি মাসে ১০০ করে টাওয়ার স্থাপন করবেন। আশা করি, তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করবেন।’
দ্বন্দ্বের কারণে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন গ্রাহকরা। নিয়ম থাকা সত্ত্বেও টাওয়ার স্থাপন না করে এত দিন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের গুটিয়ে রাখায় গ্রাহকরা বঞ্চিত হন কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রাপ্তি থেকে। নিয়ম মেনে টাওয়ার স্থাপনে বিটিআরসি তাগিদ দিলেও মোবাইল অপারেটর এবং টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তা উপেক্ষা করে চলছিল। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে বিটিআরসির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল মোবাইল অপারেটর ও টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানির মধ্যে।
জানা যায়, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো টাওয়ার স্থাপনে আগ্রহী না হওয়ায় নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেয় বিটিআরসি। গত ৫ নভেম্বর বিটিআরসির সঙ্গে সভায় বসে মোবাইল টাওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। টাওয়ার স্থাপন ছাড়া লাইসেন্সধারী কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সভায় প্রতি মাসে ১০০ টাওয়ার স্থাপন করার অঙ্গীকার করে কোম্পানিগুলো।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আল ইসলাম। তিনি বলেন, তারা বাংলালিংকের সঙ্গে এসএলএ সম্পন্ন সাপেক্ষে ২৫৯টি টাওয়ার বানাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫০টি এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরো ১০৯টি টাওয়ার নির্মাণকাজ শেষ করায় সচেষ্ট থাকবেন তারা।
ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক (প্রকৌশল) সাব্বির আহমেদ জানান, তার প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে টাওয়ার নির্মাণকাজ শুরু করেছে। তবে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায় কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটা নিরসন হলে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারবেন তারা।
কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেসের প্রধান আনিস আহমেদ বলেন, বিভিন্ন অপারেটরের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শেষ হলে শিগগিরই বিভিন্ন স্থানে টাওয়ার স্থাপনে নামবেন তারা।
এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসেন মঞ্জুরুল হাসান বলেন, আগামী তিন মাসে ৩০০ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বিটিআরসির এক প্রস্তাব থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মোবাইল ফোন গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে টাওয়ার শেয়ারিং অপারেটর লাইসেন্স দেয় সরকার। তাতে শর্ত ছিল টাওয়ার স্থাপন করার ক্ষেত্রে টাওয়ারে সঙ্গে সম্পৃক্ত সব রিসোর্সের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার। একই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে অবকাঠামোর সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা অধিকতর সাশ্রয়ী, মানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব করার।
Leave a Reply