স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলায় এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো মাদক। কী শহর, কী গ্রাম—সবখানে মাদকের ছড়াছড়ি। মাদক কারবারে যুক্ত এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কিশোর-যুবকরাও। গোয়েন্দা (ডিবি) এবং স্থানীয় থানার পুলিশ এখন গ্রাম থেকেও নিয়মিত মাদক অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে। মাদকের কারণে গ্রাম এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও বখাটেপনা এখন নিত্য ঘটনা। রাজনৈতিক অথবা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এসব মাদক অপরাধীর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলে না। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় বেশির ভাগ স্থানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে একেবারে নীরব। কখনো কখনো দরবার-সালিস করে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। একাধিক ব্যক্তি জানান, সাধারণ মানুষ ভয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে না। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তো এলাকায় দাপট নিয়ে চলেন। তাহলে তাঁরা কেন কথা বলেন না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক এলাকায় খোদ জনপ্রতিনিধিরা মাদকে আসক্ত। সন্ধ্যার পর তাঁদের মাথা ঠিক থাকে না। কাজেই তাঁরা আর মাদকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন? এমন লোকদের ভোট দেন কেন? এ প্রশ্নে একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতীকের কারণে এখন অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি জয়ী হয়ে যান। আর ভালো মানুষ তো এখন প্রার্থীই হন না। নিরীহ লোককে কেউ ভোটও দেয় না।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট, ফুলপুর, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, গফরগাঁও, ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, সদর, মুক্তাগাছা, তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবার চলে। এসব উপজেলার অনেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকসংশ্লিষ্টতার গুঞ্জন আছে।
এদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকা হলো মাদকের উর্বর ভূমি। নগরের প্রায় সব এলাকায় এখন কমবেশি মাদক কারবার আছে। নগরের অনেক এলাকার অলিগলিতে মাদক সেবন চলে। অনেক মহল্লায় মাদকসেবী ও কারবারিদের দাপট একেবারে প্রকাশ্য। মাদক কারবারিরা ও বখাটেরা স্থানীয়ভাবে পরিচিত। কিন্তু এসব মাদক অপরাধীর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলরেরই জোরালো ভূমিকা চোখে পড়ে না। হাতে গোনা কয়েকজন কাউন্সিলর মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বেশির ভাগই নীরব। আবার কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মাদক কারবারি কিংবা মাদকাসক্তদের একসঙ্গে চলাফেরার দৃশ্যও চোখে পড়ে। মাদক নিয়ে নগরের অনেক এলাকায় অহরহ নানা অশান্তির ঘটনা ঘটে। অনেক নিরীহ নাগরিক এখন রীতিমতো বিরক্ত এসব মাদকসেবীর অত্যাচার আর চাঁদাবাজির কারণে।
একাধিক ব্যক্তি জানান, নিজ নিজ এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান স্পষ্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। মাদক অপরাধীদের নাম-ঠিকানা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে। মাদক প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধ এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।
জেলা নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম বলেন, ‘মাদক প্রতিরোধে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধির কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। বরং কারো কারো বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যায়। মাদক প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁদের এ কাজে যুক্ত করতে হবে।’
নগরের কুখ্যাত মাদক কারবারিসহ প্রত্যন্ত এলাকার মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে ডিবি পুলিশ। জেলা ডিবির ওসি শাহ কামাল বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলে পুরো জেলায় মাদকের বিস্তার রোধ করা অনেক সহজ।’
Leave a Reply