রমজান আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক : ময়মনসিংহের নান্দাইলে একরাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমান ফসল সহ বিভিন্ন কৃষি জমি ও মাছের ফিসারী। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে নান্দাইল উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও মাছের ফিসারী পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নান্দাইলে অতি বৃষ্টির ৭দিন পার হলেও এখনও কমছেনা পানি। এতে করে কৃষকের অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় করে আমন আবাদ করেছিল কৃষকেরা সম্পূর্ন নষ্ঠ হয়ে যাওয়া দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। পাশাপাশি মৎস্য চাষকৃত ফিসারী, ডোবা ও পুকুরের পাড় ডুবে গিয়ে মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশায় ভোগছে মৎস্য চাষীরা।
নান্দাইল উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে একই অবস্থা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তুু প্রাকৃতিক কারণে ৫ হাজার হেক্টর জমি সম্পুর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে ৭ হাজার হেক্টর। অন্যান্য কৃষি আবাদ (সবজি, পান ও আখ) নিমজ্জিত হয়েছে ১৭৫ হেক্টর জমি।
এছাড়াও উপজেলার পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নের ৪৫০ হেক্টর পুকুর-দীঘি ও খামারের ২২কোটি ৫০ লাখ টাকার পোনা ও মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে উপজেলার মৎস্য চাষীদের সর্বনাশ হয়েছে। চাষীরা বলছেন, এই ভয়াবহ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তাদেরকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পৃষ্টপোষকতা দিয়ে পুর্ণবাসনের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয় তবেই তারা মাথা তোলে দাঁড়াতে পারবেন। অপরদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৪৫০ হেক্টর ফিসারী পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৯শত মেট্টিক টন মাছ বের হয়ে যাওয়া মৎস্য চাষীরা তিগ্রস্থ হয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন এলাকার মৎস্য শিকারীরা ব্যস্ত সময় পার করছে মাছ ধরতে। বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সামগ্রী দিয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠেছে তারা। এ যেন কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাটও পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে করে যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহ জীবন-যাপনে দুর্ভোগের ছায়া নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে আচারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ও মৎস্যচাষী রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে চোখের সামনে ২৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেলো। কিছুই করতে পারলাম না। এছাড়াও তার ইউনিয়নে মৎস্য চাষীদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন। তিনি সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা ও স্বল্পসুদে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কৃষকদের পুর্ণবাসন করার দাবি জানান।
মৎস্য চাষী আলী আমজাদ খান বলেন, ২৮ লাখ টাকার মাছ আগাম বিক্রি দেওয়া ছিল। এখন সাকুল্য টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার মতো আরও অনেক মৎস্য চাষী এখন শুধু চোখে অন্ধকারই দেখছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সুদৃষ্টি গিয়ে মৎস্য চাষীদের কৃষি ঋণের মাধ্যমে সহযোগিতা করেন তবেই আমরা সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতে পারব। বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, প্রকৃতির খেলার সাথে আমাদের কিছুই করার নেই। এদিকে আবার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। ধান না হলে আমরা খাব কি? তবে সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা জানান, নদী-নালা-খাল বিল ভরাট হয়ে যাওয়া বা পুন খনন না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বন্যার আকার ধারন করায় ফসলাদি তিগ্রস্থ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। তবে পানি নেমে গেলে পরবর্তী ফসল রায় আমাদের প থেকে কৃষকদেরকে পরামর্শ সহ সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহনাজ নাজনীন জানান, তিগ্রস্থ মৎস্য চাষীদের তালিকা তৈরী হচ্ছে। সরকারের প থেকে চাষীদের সহযোগিতার নিদের্শনা পেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
Leave a Reply