অন্তঃসত্ত্বা লাভলী বেগমের (২৫) প্রসব বেদনা ওঠে সম্ভাব্য সময়ের আগেই। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু কর্তব্যরত সেবিকারা জানান, নবজাতকটি গর্ভেই মারা গেছে।
তাকে ফেলে রাখা হয় ওয়ার্ডের একটি বালতিতে। এ অবস্থায় প্রসূতিকে হাসপাতালে রেখেই মৃত নবজাতককে রাতেই পলিথিনে মুড়িয়ে ব্যাগে ভরে মোটরসাইকেলে বেঁধে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে নিয়ে যান এক স্বজন। সেখানে ব্যাগ থেকে বের করার পরই নড়াচড়া করে ওঠে নবজাতকটি। শুরু করে কান্না। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাকে।
গত বুধবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের নাকিরাজ গ্রামে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে লাভলী বেগমের প্রায় ছয় বছর আগে বিয়ে হয় পাশের আচারগাঁও ইউনিয়নের নাকিরাজ গ্রামের মো. আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে আব্দুল করিমের সঙ্গে।
স্বামী আব্দুল করিম জানান, অসুস্থতা বোধ করায় গত ২৭ মে তাঁর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নেওয়া হয় পাশের কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেলে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু এ সময় কর্তব্যরত সেবিকারা নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে তাকে ওয়ার্ডে রাখা বালতিতে ফেলে রাখতে বলেন। এক পর্যায়ে নবজাতকটিকে মৃত হিসেবে পলিথিনে মুড়িয়ে একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে শক্ত করে বেঁধে মোটরসাইকেলের পেছনে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর ব্যাগ খুলে বের করতেই নড়তে থাকে নবজাতকটি। শুরু করে কান্না। তাকে দ্রুত উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, নবজাতকটি পথেই মারা গেছে।
এদিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে যান লাইলী বেগম। তিনি জানান, গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে তাঁকে প্রসূতি কক্ষে নিয়ে যান কয়েকজন সেবিকা। সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। অতিরিক্ত ব্যথা হলে একটি ইনজেকশন দেওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর সন্তান প্রসব হয়। বলা হয় মৃত সন্তান প্রসব হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দিন ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিলা লতিফ যুঁথি। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি রাউন্ড ও অ্যাডমিশন ডিউটিতে ছিলাম। তবে ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই দিন লাভলী নামে নান্দাইলের কোনো রোগী ছিল না। ’
সূত্র: কালের কন্ঠ
Leave a Reply