1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

জাতীয়

শিরোনাম

বৃষ্টির পানি ধরে রাখার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে নয়ছয় ধীরগতিতে চলছে বাস্তবায়ন

  • Update Time : রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২২ Time View
প্রতীকী ছবি।

অনলাইন ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে তীব্র হচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোয় পানযোগ্য পানি সংগ্রহে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাদের কষ্ট লাঘব করতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার।

বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও এর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে ব্যর্থতার কারণ পর্যালোচনা না করেই নেওয়া হয়েছে নতুন প্রকল্প। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে শুরু হয় ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ প্রকল্প। হাজার কোটি টাকার সেই প্রকল্প ঘিরেও চলছে নয়ছয়।

২০২৫ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে গতি হারিয়েছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। প্রায় সব এলাকায় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক পানির ট্যাঙ্ক ও ট্যাপ। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা সুপেয় পানি সংরক্ষণ সামগ্রী পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

১০টি জেলার ৪৪টি উপকূলীয় উপজেলার ২২২টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য দুই লাখ পরিবারকে পানির ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার কথা। প্রতিটি ট্যাঙ্কের পানি ধারণক্ষমতা তিন হাজার লিটার। গত দুই অর্থবছরে এ প্রকল্পের ২১৮ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতির হার ৩৫ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৬ হাজার ৮৭২টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইউনিট ও পানির ট্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ২০ হাজার ৬৭৬টি ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রতিটি পানি সংরক্ষণ ইউনিট নির্মাণে ৪৫ হাজার টাকা এবং ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণে ৬ হাজার ৯৮০ টাকা ব্যয় হবে। এরই মধ্যে ৫০ হাজার পানি সংরক্ষণ ইউনিট নির্মাণ এবং ৩ হাজার ৮০০ ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত এলাকাগুলোয় সেফলি ম্যানেজড পানি সরবরাহের কাভারেজ ২০৩০ সাল নাগাদ ৬০ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হলো—গোপালগঞ্জ জেলা সদর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, রূপসা, বাগেরহাট জেলার কচুয়া, চিতলমারী, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলা, সাতক্ষীরা জেলার সদর, আশাশুনি, কলারোয়া, কালীগঞ্জ, তালা, দেবহাটা ও শ্যামনগর, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও বামনা, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, সদর, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও ইন্দুরকানী, ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া, নলছিটি ও রাজাপুর, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং টেকনাফ উপজেলা। অধিকাংশ এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের চার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৯৮৬৯টি বাড়িতে পানির ট্যাঙ্ক বসানো হচ্ছে। সরকারি খাতে সহায়ক চাঁদার নামে প্রতি উপকারভোগীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এই খাতে অতিরিক্ত ৯৮ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৩০০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্কের প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ইট। নিম্নমানের বালু ও প্রয়োজনের চেয়ে কম সিমেন্ট ব্যবহার করায় প্ল্যাটফর্মগুলো টেকসই হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল এলাকার উপকারভোগী নুর হোসেন ও শফিউল আজম বলেন, ‘অফিস খরচের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে থেকে আড়াই হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। যদিও অনেকে এখনো টাকা জমা দেননি। এ ছাড়া কাজ করতে আসা শ্রমিকদের খাবারও দিতে হয়েছে।’

ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা পরিচয়ে টাকা দেওয়ার জন্য বারবার ফোন করা হয় বলেও জানান তারা।

মহেশখালী মাতারবাড়ির রাজিব বলেন, ‘টাকা ছাড়া কোনো কাজই তো হয় না।’

কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কুতুবদিয়ায় অনেকে টাকা দিয়েছেন বা নিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু কেউ স্বীকার করে না। আমার কাছে দুটি অভিযোগ আসার পর আমি ঠিকাদারকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেছি। সরকারি কোনো কাজে উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

টেকনাফ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ফারুখ হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছি। এর বাইরে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে যাচাই করেছি। কিন্তু কেউ বিষয়টি স্বীকার করেনি। ফলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। আর নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়ার পর অনেক প্ল্যাটফর্ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত না আসার কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। মূল কথা হচ্ছে দেড় হাজার টাকার বাইরে কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের খবর পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মঞ্জুর বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দেওয়া উপকারভোগীর তালিকা ধরে ট্যাঙ্কগুলো বসানো হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ লেনদেন করলে সে দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় কার্যাদেশের চেয়ে নিম্নমানের ট্যাঙ্ক সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার ২০ শতাংশ কাজ করে ৮০ শতাংশ বিল তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্ষাকালে পানি সংরক্ষণের পর সেই পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্যাঙ্কগুলো ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হবে। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তবে বিল আটকে দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা ও সন্দ্বীপ উপজেলার কিছু এলাকায় ট্যাঙ্ক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সংযোগ। তবে গত বছর বর্ষার শেষে ড্রাম বসানোর কারণে প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কোনো কোনো এলাকায় পানি সরবরাহ শুরুর আগেই পাইপ ফেটে গেছে। এসব এলাকায়ও পানি সংরক্ষণে ট্যাঙ্ক সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ২১৬টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২১২টি। কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রথম ধাপে কাজ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। যার মেয়াদকাল ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২ হাজার ২০০টি সংযোগ চালুর লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে উপকূলীয় এলাকায় পানির ট্যাঙ্কের বরাদ্দ এসেছে ১৫৩৪টি। বিতরণ করা হয়েছে ১২৯৬টি। উপকারভোগীরা জানান, গত বছর বর্ষার শেষে এই ড্রাম তাদের কাছে পৌঁছার কারণে চলতি মৌসুমে তারা পানি সংরক্ষণ করতে পারেনি। সঙ্গে পুকুর ও বিভিন্ন নলকূপ থেকে পানি না পাওয়ার কারণে এসব এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দূর হয়নি।

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের পীর হাফেজ জালাল উদ্দিন, ছখিনা বেগম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আমীর আলীর মাঝির বাড়ির জাহেদুল আলম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চুল্লা জামার বাড়ির শাকিবুল ইসলাম জানান, গত বছর আগস্টে পানির ড্রাম দিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রায় দুই মাস সেগুলো পড়ে ছিল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মিস্ত্রিরা এসে তাড়াহুড়া করে পাইপের সংযোগ বসিয়ে চলে যায়। কিন্তু ততদিনে বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় আর বৃষ্টি পানি ধরে রাখার সুযোগ ছিল না।’

প্রকল্পের আওতায় থাকা সীতাকুণ্ডের মানুষ জানায়, সংযোগ পেতে নির্ধারিত অর্থের বাইরে টাকা আদায় হচ্ছে। অনেক বিত্তবান সরকারি এই সুবিধা পেতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করছেন। তাড়াহুড়া ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন বাড়িতে বসানো ট্যাঙ্কের মুখ থেকে সংযোগ আলাদা হয়ে গেছে।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের আগস্টের দিকে মেঝে পাকা করার পর ট্যাঙ্ক বসানো হয়। একমাস পর কিছু মিস্ত্রি এসে পাইপের সংযোগ দেয়। কিন্তু নিম্নমানের সংযোগ ব্যবহারের কারণে সংযোগ পাইপ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাইপের বিভিন্ন অংশ থেকে উঠে আসে গাম। পরে নিজেদের উদ্যোগে সেগুলো মেরামতের পর ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। একই ভোগান্তিতে পড়েছেন মান্দারীটোলা গ্রামের শাহ আলমও।

বারৈঢালা ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর এলাকার রুবেল বলেন, ‘সরকারি তহবিলে কত জমা দিতে হয় সেটা জানি না; কিন্তু আমি আড়াই হাজার টাকা জমা দিয়েছি।’

যদিও সীতাকুণ্ড উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পরিবারকে এই সুবিধা নিতে সরকারি খাতে দেড় হাজার টাকা জমা দিতে হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরায় ১৭ হাজার ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হচ্ছে। গত বছরের মে মাসে প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করেছে। তবে সেখানেও চলছে দায়সারা কাজ।

লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। সেখানকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তদারকি করার মতো কেউ নেই। ফলে অধিকাংশ প্রকল্প নামমাত্র পড়ে আছে। এসব প্রকল্প আসল অর্থে কোনো কাজের নয়। শুরু থেকেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সরকারি প্রকল্পগুলো যদি ঠিকমতো কার্যকর হতো তাহলে পানির সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হতো।’

বরগুনায় মাঠ পর্যায়ে এ প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২৬টি ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষের দিকে এসে অনেক ট্যাঙ্ক বসানো হয়নি।

পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ছোট পাথরঘাটা গ্রামের সেলিম খানের বাড়িতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ট্যাঙ্ক বসানোর জন্য সাত বছর আগে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি এখন গোয়ালঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশুদ্ধ পানির প্রকল্পে গোয়ালঘর কেন—জানতে চাইলে সেলিম খান বলেন, ‘ঘরটি নির্মাণের দুই বছরের মধ্যে ভেঙে গিয়েছিল। এরপর থেকে পানি সংরক্ষণ করা যায়নি। পরে মেরামত করে গরু লালন-পালন করছি।’

এই বাড়ির একটু দূরেই মো. বেলালের বসতঘর। তার বাড়িতেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বসানো হয়েছিল ট্যাঙ্ক। এখন সেটি হাঁস-মুরগির খামার। এই উপজেলার যেসব বাড়িতে ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছিল, এর সবগুলোর চিত্র একই। অনেক বাড়িতে সেই ঘরের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আরেক উপকারভোগী আবদুল খালেক গাজী বলেন, ‘নির্মাণের বছর খানেকের মধ্যে ঘরের পিলার ভেঙে যায়। তারপর থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়নি। এরপর ঘরটি জোড়াতালি দিয়ে হাঁস-মুরগি পালন করছি।’

ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলায়ও পানির ট্যাঙ্ক বসানোর জন্য দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানান, সংশ্লিষ্ট অফিসের চাহিদা অনুযায়ী তারা উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।

কাঁঠালিয়া উপজেলার জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচ এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘যার নামে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং বরাদ্দ হয়েছে, তার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে জমা নিচ্ছি। এর বেশি কেউ নিয়ে থাকলে তার দায়ভার আমাদের নয়। যার নামে বরাদ্দ আমরা তার কাছ থেকেই টাকা নেব, অন্য কোনো মাধ্যমে নেব না।’

এদিকে পিরোজপুর জেলার সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ হাজার ৩১৬টি ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন এলাকায় কতগুলো ট্যাঙ্ক বসানো হবে, এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজও করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পিরোজপুর সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আল-আমীন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা তালিকা না দেওয়ার কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি।’

পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘সাইট নির্ধারণ হলেই কাজ শুরু করতে পারবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে আশা করছি।’

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের নানা অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পে অনানুষ্ঠানিকভাবে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা মগের মুল্লুকের মতো একটি বিষয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে যেই জনগণের নামে প্রকল্প চলছে তাদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করা দুঃখজনক। আদায়কৃত অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে কোথায় জমা হচ্ছে—তারও সুনির্দিষ্ট দালিলিক প্রমাণ নেই। অথচ এখানে প্রতারণার মাধ্যমে আরও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি সার্বিকভাবে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রকল্প। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যারা দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন তাদের উচিত অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা। কী ঘটছে এই প্রকল্পে, কারা কী প্রক্রিয়ায় কোন যুক্তিতে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই অর্থ আদায় করছে। এগুলো খতিয়ে দেখে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নূর আহাম্মদ বলেন, ‘এই প্রকল্পে উপকারভোগী কারা হবেন—তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঠিক করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ৫০ শতাংশ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা বাকি ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেন। আগে এ ধরনের কোনো প্রকল্প ছিল না, এটি একটি নতুন প্রকল্প অধিদপ্তরের জন্য। প্রকল্পের যা যা আছে, সেভাবে যেন কাজগুলো হয় সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। তার পরও যদি কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়— সেগুলো স্বচ্ছভাবে করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘উপকারভোগীদের কাছ থেকে সরাসরি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কেউ টাকা সংগ্রহ করেন না। জনপ্রতিনিধি বা তার প্রতিনিধি টাকা সংগ্রহ করে আমাদের অধিদপ্তরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। উপকারভোগীর কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হয়—তা জানার সুযোগ আমাদের নেই।’

সূত্র: কালবেলা

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews