শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার পর আবার স্কুলের টিনের ঘর বিক্রি ও এফডিআর করে ব্যাংকে রাখা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত আরিফুর রহমান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামশা বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর’র টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সোমবার দুপুরে স্থানীয় দুই সংবাদকর্মীর ওপর চড়াও হন তিনি ও তার দুই ছেলে স্বাধীন (২২) ও আমান (২০) । এ ঘটনায় সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন।
জানা গেছে, এর আগে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা হওয়ায় গত ৮ বছর যাবত তার সরকারি বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ার আকড়ে ধরে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ও এনটিআরসিএ’র নিয়োগপত্র ছাড়াই ৩ শিক্ষক নিয়োগ দেন তিনি। সেই সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আরো দু’কর্মচারী নৈশ প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ওই নিয়োগ স্থগিত করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা এমপিও শীট হতে নাম ও ইনডেক্স নম্বর কর্তনের আবেদন জানান। এদিকে, অবৈধভাবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যায় কাজের জন্য ভুল স্বীকার করে স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান। সেই সাথে নিজ দায়িত্বে ওই শিক্ষক ও কর্মচারীর এমপিও বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং না হলেও রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে লিখিতভাবে দায় স্বীকার করেন আরিফুর রহমান।
ওই আলোচনার রেশ না কাটতেই ফের স্কুলের পুরনো টিনের ঘর বিক্রির ৩ লাখ ৯৫ হাজার ও এফডিআর’র ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাত করেন ওই প্রধান শিক্ষক, এমন অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন ওই স্কুলে গিয়ে সহকারি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে প্রধান শিক্ষকের এসব অপকর্মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষককে স্কুলে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তার বাড়িতে যান সাংবাদিক মাসুম বাদশাহ ও সোহরাব হোসেন। এ সময় অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে স্কুলের ঘর বিক্রি ও এফডিআর‘র টাকা স্কুলের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এক পর্যায়ে পূর্বের প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে শিক্ষক আরিফুর রহমানের ছেলে স্বাধীন ও আমান সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পুনরায় তার বাবার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সংবাদ প্রকাশ করা হলে মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেন তারা।
সাংবাদিকের করা জিডি‘র বিষয়ে সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রধান শিক্ষকের ধারাবাহিক অপকর্মগুলো দুঃখজনক। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ন্যক্কারজনক ও গর্হিত কাজ বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।
সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম আবদুল হান্নান এ ব্যাপারে বলেন,অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া ৩ শিক্ষক ও ২ কর্মচারীর এমপিও বাতিলের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। পুরানো টিনের ঘর বিক্রি ও এফডিআরের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি অবগত নই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।