রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পীরগঞ্জে মহিষের গাড়িতে বরযাত্রা বারসিক এর উদ্যোগে খাদ্য নিরাপদ স্বাস্থ্য ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত ঈশ্বরগঞ্জে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শর্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রদূতরা পুলিশের এসকর্ট সুবিধা পাবেন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নান্দাইলে হক ফাতেমা পাঠাগার পরিদর্শনে উপজেলা একাডেমিক সুপাইভাইজার হরিরামপুরে যুবলীগের শান্তি সমাবেশ ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেলেন ৫ মেয়র পদপ্রার্থী কেসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে কঠোর প্রশাসন  হরিরামপুরে জনবান্ধব ও জনগনকে সাথে নিয়ে আগামীর পথ চলতে চায় ইউপি সদস্য- মো:লাল মিয়া নান্দাইলে ৯টি চোরাই গরু উদ্ধার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

চিকিৎসার অজুহাতে বাড়িতে ডেকে এনে বিয়ে, বিয়ের আসরেই তালাক!

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩
  • ৭৮ Time View
স্থানীয় বাজারে একট চক্ষু সেন্টারে চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন হাফেজ মো. শফিকুল ইসলাম (২৪)। সেখানে নিয়মিত মায়ের চোখ দেখাতে যাওয়ায় স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী ভিক্ষুকের সাথে তার পরিচয় হয়। মানবিকতাবোধ থেকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করান তিনি। এক রাতে মায়ের চোখের ব্যাপক সমস্যা দেখা দিলে রাতে ওই নারী ফোন করে শফিকুলকে ডেকে নেন নিজ বাড়িতে। সেখানে যাওয়ার পর আগে থেকে ওত পেতে থাকা এলাকার একটি চক্র ঘরে প্রবেশ করে ওই শফিকুলকে আটকে অনৈতিক কাজ করেছে অজুহাতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় বিয়ে করানোর হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে কাজি ডেকে এনে গভীর রাতে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে জোরপূর্বক বিয়ে  নিবন্ধন করে চক্রটি।

 

 

পরে ফাঁদে ফেলে শফিকুলের পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আদায় করে ওই বিয়ের আসরেই কয়েক ঘণ্টা পরেই গতকাল শনিবার ভোরে নারী ভিক্ষুকের সঙ্গে তালাকের ব্যবস্থা করে। লজ্জায় ও অপমানে শফিকুল নিজের গ্রামে মুখ দেখাতে পারছেন না। অপরদিকে তার পরিবার এ ঘটনার বিচারও পাচ্ছে না। ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার হলে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে চক্রটি ওই নারী ও তার মাকে আজ রবিবার বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে। 

গত শুক্রবার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দত্তপুর গ্রামে। ওই নারীর নাম জোসনা বেগম (৪৫)।জোসনা বেগমের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মোছা. জুবেদা খাতুন বলেন, ‘জোসনা ও তার মা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। জোসনার একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। অন্যদিকে তরুণের নাম মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা। একই ইউনিয়নে মধুপুর বাজারে দ্বীন ভিশন চক্ষু সেন্টার ও চশমা বিক্রির তার একটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানে চোখের চিকিৎসক এসে রোগী দেখেন।’

 

আজ রবিবার নান্দাইল উপজেলার দত্তপুর গ্রামে গিয়ে জোসনার বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় পাশের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার সময় সাত-আটজন তরুণ একযোগে জোসনার বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা এই প্রতিবেদকের কাছে জোসনার বাড়িতে আসার কারণ জানতে চায়। সবুজ মিয়া (২৫) নামে এক তরুণ দাবি করেন, ‘শফিকুল ইসলাম জোসনার বাড়িতে এসে ধরা খেয়েছেন। তাই আমরা ইউপি সদস্য মিলন মিয়ার নেতৃত্বে অনেক গ্রামবাসী মিলে তাদের দুজনের বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি।’বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পর ওই তালাক হলো কিভাবে―এ প্রশ্নের উত্তরে সবুজ বলেন, ‘সেটি জানি না।’ বিয়েটি কী টাকা আদায়ের কৌশল ছিল কি না প্রশ্ন করা হলে সবুজ টাকা নেননি বলে জানান।

 

এ সময় মোটরসাইকেলে করে সেখানে ছুটে আসেন দত্তপুর এলাকার ইউপি সদস্য মো. মিলন মিয়া। তিনিও এখানে আসার কারণ জানতে চেয়ে প্রতিবেদককে জানান, শফিকুল ইসলাম এখানে অসামাজিক কাজ করতে এসেছেন। তাই নারীর সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন।এখানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে আইনের সহায়তা নিতে পারতেন। কেন নেননি প্রশ্ন করলে ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, ‘আমরা এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার-আচার আমরাই করব।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দত্তপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, চক্রের সদস্যরা এ ধরনের নানা অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে।উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোছা. তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা অপরাধ। শফিকুল ইসলাম আমার আত্মীয়। তার পরও তাকে ছাড় দেওয়া হয়নি।’

ঈশ্বরগঞ্জের নাউড়ি গ্রামে অবস্থিত শফিকুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বড় ভাই সোহাগ জানান, তিনি লজ্জায় আড়ালে আছেন।

তিনি জানান, তার ভাই একজন হাফেজ ও স্থানীয় একটি মসজিদে মাঝেমধ্যে ইমামতি করেন। মধুপুর বাজারে চশমা বিক্রির একটি দোকান আছে তার। এ ছাড়া চোখের চিকিৎসা করাতে একটা কোর্সও করেছেন। দত্তপুর গ্রামের জোসনা নামের এক নারী তার ভাইয়ের দোকানে মাঝেমধ্যে ভিক্ষা করতে আসতেন। জোসনার মায়ের চোখের সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা দেখানোর জন্য মুঠোফোনে ফোন করে তার ভাই শফিকুলকে গত শুক্রবার বাড়িতে ডেকে নিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ইউপি সদস্য মিলন মিয়ার নেতৃত্বে এই চক্রটি তার ভাইকে আটক করে বাড়িতে ফোন করে টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হলে নিকাহ রেজিস্ট্রার ডেকে এনে ১০ লাখ টাকা কাবিন মূলে বিয়ে পড়িয়ে দেয়।

 

 

 

তিনি আরো জানান, পরে রাত ৩টার দিকে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দিয়ে ছয় লাখ টাকা দাবি করে। মানসম্মান বাঁচাতে পৌনে ছয় লাখ টাকা দিয়ে ভাইকে মুক্ত করে আনেন। চক্রটি দ্বিগুণ বয়সী এক নারীর সাথে তার ভাইয়ের বিয়ে পড়িয়ে ফাঁদে ফেলেছিল।মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. আজিজুল ইসলাম বিয়ে করানোর সত্যতা স্বীকার করে জানান, এটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। তাই কিছুক্ষণ পরই বিয়ের আসরেই মেয়ে তালাক দিয়েছে। তিনি তালাকের অনুলিপি ছেলেকে (বর) দিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তাকে পাঁচ হাজার টাকা বকশিশ দেওয়া হয়েছে। মিলন মেম্বার তাকে ডেকে এনেছিলেন।

সূত্র: কালের কন্ঠ
Print Friendly, PDF & Email
Spread the love
  •  
  •  
  •  

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
raytahost-gsnnews