কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ঈদগাহ পরিচালনা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তুতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চার স্তরে রাখা হয়েছে।
১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাব অনুযায়ী এবার হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত।
ঈদের দিন সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
এ মাঠে একসঙ্গে তিন লাখের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সঙ্কেত দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। ওজুখানা ও শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। চলছে শোভাবর্ধনের কাজও। তাছাড়া নামাজিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিকেল টিম, দূর-দূরান্তের নামাজিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দৃটি নামাজিদের নিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে আসবে; নামাজ শেষে আবার ফিরে যাবে।
জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করছেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জামাতের মুসল্লিদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেন মুসল্লিরা নিরাপদে জামাতে এসে নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারেন। জামাতে শুধু টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া কিছু বহন করা যাবে না। মোবাইল ফোন আর ছাতাও রাখা যাবে না।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তায় অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি শাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়া মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের চারটি ড্রোন ক্যামেরা। থাকবে ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা।
মুসল্লিরা নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, মাঠে শতাধিক র্যাব সদস্য কয়েক স্তরে দায়িত্ব পালন করবে। পুরো মাঠ নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। মাঠে নজরদারি রাখতে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক ও জেলা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে।