যত্রতত্র ও প্রকাশ্যে (পাবলিক প্লেসে) ধূমপান করা না হলে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কারণ আগুন না নিভিয়ে অনেকে সিগারেটের জ্বলন্ত অংশটি ফেলে দেন। এ থেকেই অনেক সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট এ অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। অনেক মানুষক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি সমবেদনা জানাই। আগুনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এই মুহূর্তেই সবার সতর্ক হওয়া জরুরি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-২০২২ সাল এই পাঁচ বছরে সিগারেট বা বিড়ির ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৭ হাজার ৯৭৯টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এরমধ্যে ২০২১ সালে ৩ হাজার ১৯৩টি যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০২২ সালে একই কারণে ৩ হাজার ৮৭৮টি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অধিক। যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
বঙ্গবাজারে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তার কারণও সিগারেট বা কয়েল বলে অনুমান করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইনে ধূমপানের স্থান রাখারও একটি বিধান বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত ধারাকে কাজে লাগিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো সুকৌশলে বিভিন্ন জায়গায় ধূমপানের স্থান তৈরি করছে। মূলতঃ দুইটি বহুজাতিক কোম্পানির মদদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধূমপানের স্থান তৈরি করা এবং এসব স্থানে যুবকদের ধূমপানে উৎসাহিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষের জীবন ও সম্পদকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করা হচ্ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট মনে করে যে, বর্তমানে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর যে আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে সেখানে ধূমপানের স্থান রাখার বিধান বাতিল করা জরুরি। সব মালিক ও মার্কেট কর্তৃপক্ষকে আমরা আহ্বান জানাই, তারা যেন তাদের প্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত রাখে। মাত্র কিছু মানুষের ধূমপানের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ এবং মানুষের জীবনকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। ধূমপানের স্থান নিষিদ্ধ হলে শুধু সম্পদই রক্ষা পাবে না, এতে অধূমপায়ীরাও স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাবে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ এসব আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিজেরাই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। পাশাপাশি সরকারও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ধূমপানের স্থান বিধান বাতিলের মাধ্যমে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে।