নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামত করার জন্য অর্থের যোগান নিয়ে সংঙ্কটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন সময়ে কেনা ইভিএমগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে ব্যবহারের জন্য এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস মেরামত করা প্রয়োজন। যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। বিএমটিএফ ও ইসির মধ্যে গত বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি। বাড়তি বরাদ্দের টাকা না থাকায় সংঙ্কটে পড়েছে কমিশন। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে ইভিএম সংরক্ষণে ওয়্যারহাউজ ভাড়া নেয়া নিয়েও সৃষ্ট জটিলতা এখনো কাটেনি। অনেক জেলায় চাহিদার বিপরীতে বড় আয়তনের বাসাও পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব ইস্যুতে উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে নির্বাচন ভবনে সভার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সভা হয়েছে। সভায় অন্য নির্বাচন কমিশনার, বিএমটিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক, আইডিইএ-২ প্রকল্পের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইভিএম সংরক্ষণ ও মেরামত করতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছে বিএমটিএফ। কিন্তু আমার প্রাথমিক ধারণা ছিল এর জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে যে বরাদ্দের চাহিদা দেয়া হয়েছে তা অসামঞ্জস্য বলে মনে হয়েছে। একটি সভায় এগুলোর সমাধান সম্ভব না। কমিশনকে আরও সভায় মিলিত হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আগের কে এম নুরুল হুদা কমিশনের সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রকল্প পাস হয়। ওই নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনসহ ছয়টি সংসদীয় আসনে ভোট নেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ত্রুটির মধ্যে কোনোটির তার ছিঁড়ে গেছে, কোনোটির ব্যাটারি নষ্ট। আবার মনিটর নষ্ট হয়েছে কিছু সংখ্যক ইভিএমের।
কোথায় কীভাবে সংরক্ষিত আছে তার একটি তথ্য পাওয়া যায় ইভিএম প্রকল্পের পরিচালকের দপ্তর থেকে। সেখানে বলা হয়েছিল, মজুদ ইভিএমের মধ্যে ৭০ হাজার বিএমটিএফে এবং বাকিগুলো অর্থাৎ ৮০ হাজার বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে কাগজের বক্সে মাঠে পাঠানো ইভিএমের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হবে।
এদিকে, ইভিএম রাখা বিএমটিএফের গুদাম ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না কমিশন। কারণ, ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের জন্য সম্প্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে কমিশন। চিঠিতে বলা হয়, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য বিএমটিএফের গুদামে মাল্টিফাংশনাল সুযোগ-সুবিধা আছে। সেখানে ইভিএম সংরক্ষণ করতে চায় ইসি। গুদামের প্রতি বর্গফুট ভাড়া হিসেবে প্রায় ১৫২ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে।
কিন্তু এ বিষয়ে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। তাই মতামতের জন্য প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারা বিষয়টির নিষ্পত্তি না করে পূর্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়।
এছাড়া গত বছর মার্চে ইভিএম সংরক্ষণে ৬৪ জেলায় গুদাম ভাড়া করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি। ২৪টিরও বেশি জেলায় গুদাম ভাড়া নেওয়া হয়। বাকি জেলাগুলোতে গুদাম ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইসির মাঠ কর্মকর্তা এসব সংরক্ষণ ও আনা-নেয়ায় আলাদা খরচ নির্ধারণের জন্য কমিশনকে চাপ দিয়ে আসছে। সঙ্গে যানবাহন খরচও।