বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি এবং দেশের কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে রবিবার (১৫ জানুয়ারি) শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবার মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ জুবায়ের। আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত করা হয়। মুসল্লিরা যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। এ সময় কান্নায় বুক ভাসান তারা। ২৩ মিনিটের মোনাজাতে বিশাল এ জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

প্রথম ১০ মিনিটব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জুবায়ের পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। পরে ১৩ মিনিট বাংলা ভাষায় মোনাজাত করেন। মোবাইল ফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোলচত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতে লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কারসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন মুসল্লিরা। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কি-ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখী হন।

রবিবার সকালেও চারদিক থেকে মুসল্লিরা হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছান। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। আখেরি মোনাজাতের জন্য এদিন আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এতে কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে দীর্ঘ জনজট ও যানজট দেখা দেয়। আগামী মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করবেন। মাঠ বুঝিয়ে দেওয়া হবে প্রশাসনের কাছে। পরে প্রশাসন মাওলানা সাদ অনুসারীদের কাছে ময়দান বুঝিয়ে দেবেন।

চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আর ২৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা।