1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

জাতীয়

শিরোনাম

ঝুঁকিতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে

  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ৯১ Time View
ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। সবশেষ সোমবার (২৪ অক্টোবর) বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে হানা দেয় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় প্রাণহানি কম হলেও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বারবার এসব দুর্যোগ বাংলাদেশসহ নানা দেশে হানা দিচ্ছে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মতে, ঘূর্ণিঝড়সহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এ বিষয়ে এখনই পরিকল্পিত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য খারাপ দিন অপেক্ষা করছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস ১ শতাংশেরও কম নিঃসরণ করে বাংলাদেশ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্তত ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে, যার পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত ৬০ বছরে ছোট-বড় অন্তত ৩৩টি ঘূর্ণিঝড় এ দেশে আঘাত হেনেছে। শুধু শেষ ১৫ বছরে আঘাত হেনেছে অন্তত ৯টি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়।

জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত সবশেষ জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, ঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। ফলে মানবজাতির অর্ধেকই চরম বিপদের মধ্যে পড়েছে। এজন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের অভ্যাস বদলাতে হবে। তা না হলে কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে না।

গুতেরেস বলেন, আমাদের সামনে দুটি বিকল্প থেকে একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে হয় একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে, নয়তো একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে হবে।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল সংস্থা বলছে, প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হাসান বলেন, গত ৩০ বছরের আবহাওয়ার রেকর্ড যদি আমরা দেখি, সেখানে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গেছে। বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড় এবং টর্নেডোর একটা সম্পর্ক আছে। আর এ কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড় আগের কয়েক দশকের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। পূর্বাভাস, যোগাযোগ ও প্রস্তুতি ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে প্রাণহানি কমেছে। কিন্তু ঝড়গুলোর প্রভাব গিয়ে পড়ছে ফসল, গাছপালা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর।

অন্যদিকে ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়কে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্র খুঁজে পাননি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সম্পর্ক রয়েছে।

আইনুন নিশাত বলেন, সাধারণত সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৬-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে সেখানে দ্রুত বাষ্পীভবন ঘটে এবং বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। ফলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বাতাস সেখানে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এভাবে ওই এলাকায় একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, যা থেকে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।

চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত ছয় বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এই হিসাব শুধু দুর্যোগপ্রবণ এলাকার। সারা দেশের হিসাব করা হলে সেটি আরো অনেক বেশি হবে। জরিপের তথ্য মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে, ৫২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি শস্য খাতে ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

যদিও এ জরিপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।

অন্যদিকে চলতি বছরের অক্টোবরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ। আশঙ্কা করা হয়, সামনের বছরগুলোতে এ হার দ্রুত আরো বাড়বে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) এক গবেষণায় বলা হয়, গত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পৃথিবী। এ সময় বন্যা ও তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগগুলো বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ। মৃত্যু হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের, ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৭৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১ হাজারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়।

পাশাপাশি ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক সমীক্ষায় অনুমান করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ৪ কোটি মানুষ জলবায়ুজনিত উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews