বরগুনার আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত ২৫টি অভ্যন্তরীণ সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দ ও শত শত গর্তে ভরে গেছে। এসব গর্তে বর্ষার পানি জমে সড়কগুলো বেহাল দশায় রয়েছে। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় কাদায় পূর্ণ থাকে। সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় ও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে ২৫টি সড়কের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানি বাজার থেকে গুলিশাখালী পর্যন্ত বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়ক। এ সড়কের কার্পটিং উঠে দুই বছর ধরে পড়ে রয়েছে। এছাড়া ইটভাটার ট্রাক-ট্রলি চলাচলের কারণে অধিকাংশ জায়গার কার্পেটিং উঠে খোয়া সরে যাওয়ায় বর্ষার পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। ওই সড়কের খেখুযানি বাজারের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বাজারের মধ্যে সড়কজুড়ে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় বাজারে আসা-যাওয়া করতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একই ইউনিয়নের গুলিাশাখালী বাজার থেকে গোছখালী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও বেহাল। সড়কটির কার্পেটিং উঠে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে চরখালী সড়কটি দুই বছর পূর্বে নতুন করে কার্পেটিং করা হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে দুই বছরের মাথায় সড়কটির অধিকাংশ জায়গার কার্পেটিং উঠে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গুরুদল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ কাদের মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও ভালো নয়। সড়কটি ২০১২ সালে নির্মাণের পর আর কোনো সংস্কার না করায় সম্পূর্ণ কার্পেটিং উঠে গেছে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা থেকে মহিষডাঙ্গা সেতু পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। স্থানীয়রা তাদের চলাচলের জন্য ইটের টুকরো ফেলে সড়কটিতে কোনরকম চলাচল অব্যাহত রেখেছেন। আমতলী সদর ইউনিয়নের খেয়াঘাট থেকে নোমরহাট হয়ে হলদিয়া ইউনিয়নের অফিস বাজারের সাথে সংযুক্ত সড়কটি হলদিয়া এবং সদর ইউনিয়নের যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মাধ্যম। এ সড়কের অধিকাংশ জায়গার কার্পেটিং উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। একই ইউনিয়নের খুড়িয়ার খেয়াঘাট থেকে তারিকাটা এমপির বাজার পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার কার্পেটিং সড়কেও চলা দায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাওহিদ ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলি চলাচলের কারণে রাস্তাটির বারোটা বেজেছে। বর্তমানে ওই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
চাওড়া লোদা সেতু থেকে হলদিয়া সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কেরও একই অবস্থা। স্থানীয়রা সড়কটি সচল রাখার জন্য অনেক জায়গায় ইটের টুকরো ফেলেছেন। একই ইউনিয়নের কাউনিয়া বাঁধ থেকে কাউনিয়া গ্রামের কালাম মিস্ত্রী বাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক চলাচলের উপযোগী নয়। একই ইউনিয়নের মানিক গাজির বাড়ি থেকে চালিতাবুনিয়া হয়ে কালিবাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক আমতলী পৌরসভার সাথে সংযুক্ত। এর কার্পেটিং উঠে খোয়া বেরিয়ে এসেছে।
হলদিয়া সেতু থেকে চন্দ্র হয়ে তালুকদার বাজার পর্যন্ত আট কিলোমিটার, আমতলী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাজার থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং গাজিপুর থেকে টেপুড়া হয়ে হলদিয়া অফিস বাজার পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়কে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
গত দু’দিন (শনিবার ও রবিবার) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় ২৫টি অভ্যন্তরীণ সড়কের এমন করুণ চিত্র। ওই সকল সড়কে কার্পেটিং উঠে এতো বেশি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে সামান্য বৃষ্টি হলেই মানুষজন ও যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এসময় তারা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
খেকুয়ানি বাজারের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, খেকুয়ানি গুলিশাখালী সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে খেকুয়ানি বাজের অবস্থা খুবই করুন। বর্ষার সময় এখান দিয়ে কোনো মানুষ চলাচল করতে পারেন না। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
কুকুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন (এমএসসি) বলেন, আমতলীর সকল ইটভাটায় ইট ও মাটি টানতে যে সকল ট্রাক ও ট্রলি ব্যবহার করা হয়, আগে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। নতুবা নতুন রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করে কোনো লাভ নেই। কারণ একেকটি ট্রাক ও ট্রলি ওভারলোড নিয়ে চলাচল করায় গ্রাম-গঞ্জের রাস্তাগুলোর কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ওই গর্তে পানি জমে কাদামাটিতে পূর্ণ হয়ে যায়। এতে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, হলদিয়া গুরুদল সড়কটিসহ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ রাস্তার কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মানুষজন অনেক কষ্ট নিয়ে হাঁটাচলা করেন। সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাই।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবদুল্লা আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, আমতলী উপজেলার খানাখন্দে রাস্তাগুলোর বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো মেরামতের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে শুকনো মৌসুমে রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করা হবে।