পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি সেটি প্রমাণ করে দেখালেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের হাটশিরা গ্রামের মৃত জা বকশের ছেলে কৃষক হিরণ মিয়া (৫৫)। নিজের ৪০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন তিনি। বনে গেছেন লাখপতি। ৪০ হাজার টাকা খরচে ইতোমধ্যে তার ক্ষেত থেকে তিনি ২ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন।
আরো প্রায় ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। লাভ হওয়ায় সামনে বেগুন চাষের পরিমাণ আরো বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
হাটশিরার চরাঞ্চলে হিরণের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ সতেজ বেগুন ক্ষেত বাতাসে দুলছে। বেগুন গাছগুলো প্রায় ৫ ফুট লম্বা। প্রতিটি সতেজ গাছে ফুল এবং ১০ থেকে ১৫ টি করে বেগুন ঝুলে আছে। তিনি ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন বিক্রির জন্য। জমির পাশের মাঠে বেগুন রাখছেন।
বেগুন চাষি হিরণ জানান, প্রথম দুই দফা বিক্রি করে তার উৎপাদন খরচ উঠে যায়। পরবর্তিতে বাকি বেগুন বিক্রি করে তার সংসারে খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ টাকা আয় হয়। এই আয়ের ফলে তার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ক্ষেতের বেগুন দেখতে আকর্ষনীয় এবং খেতে সুস্বাদু। ফলে তাকে বেগুন তুলে হাট বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পাইকাররা প্রতিদিন বেগুনের জমিতে এসেই বাজার দামের চেয়ে বেশী দামেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম দিকে সপ্তাহে প্রতিদিন ৭থেকে ৮ মণ বেগুন তুলেছেন ক্ষেত থেকে। পাইকারি বিক্রি করেন তিনি। প্রথম দিকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকা মন দরে বেগুন বিক্রি করেছেন হিরন মিয়া। বর্তমানে ১ হাজার থেকে ১ হাজার দুইশত টাকা মণ দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেগুন ক্রয় করে পিকআপ গাড়িতে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে যান।
হিরণ বলেন, বর্ষাকালীন (বাইশা জাতর) বেগুনের বীজ তিনি ক্রয় করেন। ৫০০ গ্রাম বীজ ক্রয় করেন ৫ হাজার টাকায়। তবে এবার নিজের ক্ষেতের বেগুন থেকেই বীজ সংরক্ষণ করেন বলে তিনি জানান। এতে সামনের চাষে খরচ অনেকটা কমে যাবে।
তিনি জানান, বেগুন চাষে আলাদা মজুর লাগেনি। বাড়ির পাশের জমিতে চাষ করেছেন সম্পূর্ণ নিজের শ্রমে। ভাতিজা মাসুদকে সাথে নিয়ে তিনি বেগুন ক্ষেতের পরিচর্যা করেন।
হিরনের কলেজ পড়ুয়া ভাতিজা মাসুদ বলেন, বেগুন চাষে আমি কাকাকে সাহায্য করে থাকি। বেগুন বিক্রি করে কাকা অনেক লাভবান হয়েছেন।
হাটশিরা গ্রামের বাসিন্দা বাহার উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন দুপরে হিরনের জমি থেকে বেগুন নিতে পাইকাররা ভিড় জমায়। এখানে বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এসে এলাকার বেগুন কিনে হাটশিরা, বীরকামট খালী, দেওয়ানগঞ্জসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলায় পাইকারি হাটে নিয়ে যায়।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কমকর্তা আমিনুল হক বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২১০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও দাম ভাল থাকায় এবার বেগুন চাষিদের মুখে ফুটেছে হাঁসি। বছরের কোন সময়ই বেগুনের দাম খুব একটা কমেনি। তারা আগামী দিনের স্বপ্নিল জাল বুনছেন। বেগুন চাষ করে তাদের অনেকে লাখপতি বনে গেছেন।
Leave a Reply