আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার অভিযান। হারানো সংবাদ, সভা সমিতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রচারকার্য চালানো হতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ।
অতীতে গ্রাম-বাংলার হাট বাজারসহ গ্রামে গ্রামে কাঁধে ঢোল নিয়ে প্রচার করা হতো। অন্যান্যের মতো এ পেশার সঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার তাজু ঢুলি, রায়গঞ্জ উপজেলার হাট পাঙ্গাসী হাওলাদার পাড়া গ্রামের মঙ্গল ঢুলি ও সম্ভুদাস ঢুলি, কামারখন্দ উপজেলা মংলা ঢুলি, চিনা ঢুলি প্রমুখ। খাওয়া দাওয়াসহ একজন ৪ আনা থেকে ৮ আনায় ঢোল পিটিয়ে প্রচার চালাত দিনভর। এই রোজগার দিয়েই এসব দরিদ্র পরিবারের লোকজন জীবিকা নির্বাহ করত। অনেক কষ্টে চলত তাদের সংসার। বতর্মানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। তাই ঢাক-ঢোলের কদর আর নেই বললেই চলে। তারপরও কিছু কিছু গ্রাম অঞ্চলে পূজাপার্বন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে ঢাক-ঢোল বা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েই আজও সংসার চলাচ্ছে এ সকল ঢুলিরা।
সিরাজগঞ্জ জেলার পাশে বেশ কিছু জেলায় গানের আসরে নিমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে চলেন এরা ঢোল-তবলা কাঁধে নিয়ে । কাজ-কর্ম তেমন না থাকায় অধিকাংশ সময় অলস সময় পার করতে হয় তাদের। করোনার কারণে বর্তমানে কাজ না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে মঙ্গল ও সম্ভুদাস ঢুলির । রায়গঞ্জ উপজেলার হাট পাঙ্গাসী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু জানায়, মঙ্গলডুলি ও সম্ভুদাস ঢুলি খুব গরিব হলেও রয়েছে তাদের মধ্যে সততা । অনেকের মতে, দীর্ঘ দিন ধরেই ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সংসার চালাচ্ছে তারা।
রায়গঞ্জের সম্ভু ও মঙ্গল ঢুলি জানায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে ডাক ঢোলের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। তারপরও বাপদাদার রেখে যাওয়া পেশা এখনও আকড়ে ধরে রেখেছি। নানা কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে আমাদের। তারা আরও জানায়, জীবনের বাকি দিনগুলো যেটুকু সময় পাই এভাবেই কাজ করে জীবনের ইতি টানতে চাই । উল্লেখ্য, জীবিকার সন্ধানে এদের অনেকেই পেশা বদল করে ভিন্ন পেশা কাজ করে যাচ্ছেন।
কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল নিবাসী অ্যাড: সুকুমার চন্দ্র দাস জানান, অতীতে হাট-বাজারে বা গ্রামেগঞ্জে ঢোলের শব্দ পেলেই লোকজন দাঁড়িয়ে যেত আর বাড়িতে মা-বোনেরা কর্ম ফেলে সজাগ হতো সংবাদ শোনার জন্য। মাঝে-মাঝেই ঢোলের শব্দ থামিয়ে চিৎকার করে বলত, “এই যে ভাই, অমুকের ছাগল হারাইয়া গিয়াছে, কেউ পাইলে খোঁজ জানাইয়েন, কাইলক্যা জামতৈল বাজারে চান্দু খলিফার দোকানের সামনে সন্ধ্যা ৭টায় যাত্রা-গান শুরু অইবো আপনেরা আইসেন।” কালের আবর্তে সেদিনের সেই কানফাটা ঢোলের বাড়ি আর ঢোল বাদকের কণ্ঠে বিকট চিৎকার আর শোনা যায় না। মাইক আর আধুনিক যন্ত্রের দাপটে অতীতের সেই প্রচারকারীরা আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।