‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ এমন পোস্টার লাগিয়ে ভাইরাল হওয়া বগুড়ার যুবক আলমগীর কবিরের সঙ্গে কথা বলেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় আলমগীর কবির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তিনি তার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘মূলত কী কারণে এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়েছেন আলমগীর কবির এবং এর পেছনে আসলে মূল বিষয়টি কী সেটি জানার জন্য আমরা তাকে আজকে ডেকেছিলাম। তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার পারিবারিক অবস্থা এবং মাস্টার্স পাশ করার পরেও এখনও চাকরি পায়নি, এ বিষয়গুলো তিনি বলেছে।
কর্মহীনতার কারণে এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে তার মধ্যে চরম মানসিক হতাশা বিরাজ করছিল। সেগুলো তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। তবে আমরা মূলত দেখছি এর পেছনে আরও কেউ আছে কি না অথবা কোনো হীন কারণ চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনের কোনো কাজ করেছে কিনা এটাও কিন্তু আমরা নজরে রাখছি।
পুলিশ সুপার বলেন, কবিরের সঙ্গে কথা বলে আমাদের যেটি মনে হয়েছে তার একটি কর্মের প্রয়োজন এবং আমরা দেখেছি যে তার এই বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পরে বিভিন্ন সংস্থা যোগাযোগ করছে তার কর্মসংস্থানের জন্য। আমরাও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এমনকি আজকেও একটি বড় করপোরেট গ্রুপ তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো পদে তার যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকলে তারা সেই প্রক্রিয়া আজকেই সম্পন্ন করবে।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা যেটা বলতে চাই বর্তমানে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেটা কিন্তু প্রকাশিত এবং সব জায়গায় কিন্তু সেই ছোয়া লেগেছে। আমরা দেখছি গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষগুলোও কিন্তু অনেক বেশি স্বাবলম্বী। কোথাও কিন্তু ভাতের জন্য হাহাকার দেখি না। তারপরেও তার যে বিজ্ঞাপন এটি কিন্তু সবার মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ চলছে, মানুষের ভাতের অধিকার নিশ্চিতের অঙ্গীকার, সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এরকম বিজ্ঞাপন কিন্তু ছেলেমানুষি, এটি কিন্তু নেতিবাচক দৃষ্টিপাত করে। আমি সবাইকে বলবো এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।, বলেন পুলিশ সুপার।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কবিরের বিষয়টিকে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি এবং তার একটি স্বাভাবিক কর্মসংস্থানের জন্য যা যা করণীয় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্যই সেটা কার্যকরের চেষ্টা করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলমগীর কবিরের ছড়িয়ে পড়া স্ট্যাটাস সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, আমরাও এগুলো দেখেছি। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের যে সাইবার টিম আছে তারা এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে আলমগীর কবিরের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার যোগ্যতা অনুযায়ী সুইটেবল (উপযুক্ত) কোনো চাকরি পেলে তিনি করবেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর যে বিজ্ঞাপন, এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে, একটি তার একেবারেই হীনমানসিকতার পরিচয় দেয়া। আরেকটি কারণ হয়তো নিজেকে ভাইরাল করার চেষ্টাও থাকতে পারে। আমার কাছে মনে হয়েছে মানসিকভাবে সে অত্যন্ত দীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এই বিষয়গুলো দেখছি। তবে এটাও ঠিক যে যারা শিক্ষিত এবং যারা মাস্টার্স করেছে তাদের সুষ্ঠু কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আমি আশা করছি তিনি যদি একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ পান নিশ্চিতভাবেই তার যে মানসিক বৈকুল্য ছিল সেগুলো সংশোধনের মাধ্যমে তিনি স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে আমাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে পারবে।
এর আগে আলমগীর কবির এলাকায় বগুড়ার জহুরুল নগর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই, প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত’ এমন একটি পোস্টার সাঁটিয়ে দেন। এরপর তার ফেসবুক পেজেও দেন। সেই পোস্টারটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। দেশি মিডিয়া ছাড়াও তার পোস্টারটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও সংবাদ প্রকাশ হয়।
Leave a Reply