ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ততম জায়গা হচ্ছে নান্দাইল চৌরাস্তা। নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল চৌরাস্তার ব্যস্ততম এই জায়গাটিকে ব্যবহার করছে একটি প্রতারক চক্র। দূর-পাল্লার যানবাহন সহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী সাধারনকে প্রলোভন দেখিয়ে ও সাময়িক অজ্ঞান করে তাদের সাথে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত উক্ত প্রতারক চক্রটি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এতে পঞ্চাশউর্ধ্ব যাত্রী কল্পনা আক্তার ও আমেনা খাতুন সহ মোফাজ্জল হোসেন নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক এধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। নিরক্ষর মহিলা, যুবক ও স্বর্ণালংকার পরিহিত মহিলারই হচ্ছে প্রতারকদের টার্গেট।
জানাগেছে, রোববার (২২শে জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাচর গ্রামের মৃত মিলন মিয়ার স্ত্রী কল্পনা আক্তার (৫৫) নামে এক বিধবা মহিলা তাঁর মেয়ের বাড়ি তাড়াইল যাওয়ার জন্য প্রথমে নান্দাইল চৌরাস্তায় আসেন। বৃদ্ধ মহিলাটি চৌরাস্তার নান্দাইলের মোড়ে নামেন। তখনই প্রতারক চক্রটি উক্ত বৃদ্ধাকে টার্গেট করে। এসময় মহিলাটি তাড়াইল যাবার কথা বললে প্রতারক চক্রের সদস্য সিএনজি চালক ঐদিকেই যাচ্ছে বলে জোরপূর্বক তাকে গাড়ীতে উঠিয়ে তাড়াইলের রাস্তার দিকে যাত্রা শুরু করে। পরে ওই সিএনজিতে উঠে প্রতারক চক্রের অন্য দুই সদস্য। তারা পথিমধ্যে উক্ত মহিলাকে মায়ের মতো দেখতে এরকম কথা বলে বৃদ্ধ মহিলাকে ঘোমটা খুলে পরিচিত হতে বললে মহিলা খুলতে রাজি হননি। পরপরই অপর সদস্য জোরপূর্বক মহিলার ঘোমটাটি উপরে উঠালে তিনি আর কোন কথা বলতে পারেননি। এসময় বৃদ্ধ মহিলার ১ ভরি ওজনের কানের দুল ও গলার চেইন সহ নগদ ১৫শত টাকা হাতিয়ে মহিলাকে দ্রুত গাড়ী থেকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারক চক্র।
অপরদিকে শনিবার (২১শে জানুয়ারি) নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের পাছবাড়ীয়া গ্রামের মৃত সালেহ রহমানের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৫০) তিনি উপজেলা সদর থেকে বাড়ি যাবার পথে নান্দাইল চৌরাস্তায় আসেন। এসময় প্রতারক চক্র তাকেঁও টার্গেট করে। নান্দাইলের মোড় থেকে একটি ইজিবাইকে নান্দাইল রোড বাজার নামিয়ে দিবে বলে ওই মহিলাটিকে গাড়ীতে তুলে। এসময় অপরাপর ২ প্রতারক সদস্যও ওই গাড়ীতে উঠে নান্দাইল চৌরাস্তা পার হয়ে নান্দাইল রোড বাজার যাওয়ার পথিমধ্যে ইজিবাইক চালকে গাড়ী থামাতে বলে। চালক গাড়ী থামালে প্রতারক চক্রের একজন বলে রাস্তায় টাকা পড়ে আছে বলে গাড়ী থেকে নামে এবং ১০টাকার নোটে কিছু মোড়ানো রয়েছে বলে তুলে নেয়। পরে পুনরায় গাড়ীতে উঠে ওই মহিলার সামনে মোড়ানো টাকা খুলে দেখে একটি স্বর্ণের বার দেখতে পায়। এসময় ওই মহিলাকে স্বর্ণের বারটি কিনতে বলে এবং তাকে দিয়ে দিবে বলে। ওই সময় মহিলা তার কাছে মাত্র ১ হাজার টাকা আছে বলে স্বীকার করে। পরে মহিলাটিকে এই স্বর্ণের বারের দাম লক্ষাধিক টাকা বলে মহিলার ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন নিয়ে যায় এবং মহিলার হাতে নকল স্বর্ণের বার দেয়। এসময় ইজিবাইক চালক ওই মহিলাকে জানায় গাড়ীতে চার্জ নেই নেমে যেতে হবে। পরে মহিলাটি নেমে গেলে ইজিবাইক চালক মহিলাকে ফেলে রেখে অপর দুইজনকে নিয়ে নান্দাইল চৌরাস্তার দিকে এসে পরে। উক্ত মহিলা হেটে হেটে নান্দাইল রোড বাজার স্বর্ণের দোকানে গিয়ে জানতে পারে সে প্রতারিত হয়েছে।
এছাড়া ওই শনিবার দিন রাতে নান্দাইল চৌরাস্তা বাজারের বিকাশ ও ফ্যাক্সী ব্যবসায়ী প্রতিবন্ধী মোফাজ্জল হোসেনের সাথেও এঘটনা ঘটেছে। মোফাজ্জল হোসেন আচারগাঁও নাখিরাজ গ্রামের বাহার উদ্দিনের পুত্র। সে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে সিএনজিতে উঠে। পরে সিএনজিতে থাকা দুই ভদ্রলোক তাঁর মুখে গামছা পেছিয়ে মারধর করে তাঁর সাথে থাকা নগদ ২লাখ টাকা সহ বিকাশ ও ফ্যাক্সির মোবাইলসেট হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে সে প্রাণ আতংকে থাকায় কিছুই বলতে চাচ্ছেনা। প্রতিনিয়তই এধরনের প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে যাত্রীসাধারন।
এ বিষয়ে সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ উক্ত প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
Leave a Reply