1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন

জাতীয়

শিরোনাম

মানবপাচার চক্রের কলকাতা-দিল্লির টর্চার সেলের সন্ধান দিল র‌্যাব

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৬৯ Time View
প্রতীকী ছবি

ইউরোপ-অষ্ট্রেলিয়ার পাঠানোর কথা বলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানবপাচার হতো ভারতে। তারপর সেখানকার কলকাতা ও দিল্লির টর্চার সেলে চলত অকথ্য নির্যাতন। সেই নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমদের আত্মীয়দের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হতো লাখ লাখ টাকা। এমন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়েনের (র‌্যাব) সদস্যরা।

আটকরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মলি­ক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), তার দুই সহযোগী মো. বুলবুল আহমেদ মলি­ক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)।

আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষজনকে টার্গেট করে তাদের অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাত। এ প্রলোভনে যারা রাজি হতো তাদের কাছ থেকে ১২-১৫ লাখ টাকা করে নিত। পরে চক্রটি প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকদের বলত, বাংলাদেশ থেকে ভিসা পাওয়া জটিল, তাই তাদের ভারতে নিয়ে খুব সহজে কাঙ্ক্ষিত দেশে পাঠাবে। কারণ হিসেবে ভারত থেকে ভিসা পাওয়া সহজ বলে ভিকটিমদের জানায় চক্রটি।

তারা আরও জানায়, ভারতে নিয়ে গিয়ে ভিকটিমদের প্রথমে সেইফ হাউসে রাখা হতো। তারপর তাদের ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন। এসব নির্যাতন চিত্রের ভিডিওধারণ করে বাংলাদেশে থাকা ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাত চক্রটি। পরিবারকে তারা এসব ভিডিও দেখিয়ে বলত, ১২-১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে ভিকটিমকে মেরে ফেলবে। পরে ভিকটিমদের পরিবারগুলো প্রিয়জনকে বাঁচাতে সর্বস্ব বিক্রি করে চক্রটির সদস্যদের হাতে টাকা তুলে দিত।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে ভারত পাচার করে দেয় চক্রটি। পাচার হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন ভারতের কলকাতায় আটক থাকেন জাহাঙ্গীর। আটক অবস্থায় কলকাতার টর্চার সেলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে নির্যাতনের এসব ভিডিও দেখিয়ে দেশে থাকা তার পরিবারকে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করে পাচারকারী চক্রটি। দেশে এসে ভিকটিম জাহাঙ্গীর চক্রটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আমাদের কাছে। তার দেওয়া তথ্য ও অভিযোগ যাচাই করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গতকাল (সোমবার) রাতে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নকল পাসপোর্ট, পাসপোর্টের কপি, নকল ভিসা, আবেদনপত্র, বায়োডাটা, ছবি, মোবাইল, মোবাইল সিম একং নগদ টাকাসহ মানবপাচার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা মলি­ক রেজাউল হক সেলিম ও তার সহযোগী বুলবুল আহমেদ মলি­ক এবং নিরঞ্জন পালসহ তাদের সহযোগী হিসেবে দেশে আরও ৫-৭ জন সদস্য রয়েছে। তাছাড়া ভারতেও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কলকাতার রাজিব খান, মানিক ও দিলি­র রবিন সিংদের নাম পাওয়া গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে মানব পাচারের করে আসছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশে গমন প্রত্যাশী নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে। তাদের অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে (যেমন- পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স এবং মালটা) উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাঠানোর কথা বলে ভারতে পাচার করে দিত।

অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে ভারত থেকে ভিসা পাওয়া সহজ, এ কথা বুঝিয়ে তাদের বৈধ এবং অবৈধ পথে ভারতে পাচার করে দেয়। তবে পাচারের পর ভিকটিমদের আর ওইসব দেশে পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না চক্রটি। তারা ভিকটিমদের সে দেশে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ মেরে ফেলার হুমকি ও তা ভিডিও করে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে আসছিল।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, কলকাতা থেকে ভিকটিমদের নেওয়া হতো দিল্লির একটি টর্চার সেলে। পরে কলকাতার টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকত ভারতীয় নাগরিক রাজিব খান ও মানিক এবং দিল্লি­র টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকত রবিন সিং। পরে ওইসব টর্চার সেলে ভিকটিমদের ওপর চলত অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এসব নির্যাতনের ভিডিওধারণ করে প্রত্যেকটি টর্চার সেলের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ চক্রটির মূলহোতার কাছে পাঠানো হতো। পরে মূলহোতা মলি­ক তার সহযোগীদের মাধ্যমে ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠাত। ভিকটিমদের পরিবারগুলো যে পর্যন্ত তাদের মুক্তির জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিত সেই পর্যন্ত তাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চলতেই থাকত। এই চক্রটি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা আরও জানায়, ভিকটিমদের ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ইউরোপে উন্নত চাকরি দেওয়ার নামে বৈধ এবং অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে। এ চক্রের অন্যান্য হোতাদের আটকে র‌্যাব-৪ এর অভিযান চলমান রয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে রূপনগর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews