হতদরিদ্র বিধবা মনোয়ারা খাতুন (৬৪) থাকেন একটা ভাঙ্গাচুরা ঘরে। দিনের বেলা রোদের আলো রাতের বেলা চাঁদের আলো বাদলা দিনে বৃষ্টির পানি সবই প্রবেশ করে তার ঘরে।
মনোয়ারার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়, সে উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম কূল ধূরুয়া গ্রামের মৃত আঃ জলিলের স্ত্রী। চার যুগ আগে বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সান্দিকোণা গ্রামে।
স্বামীর অসুস্থতা সন্তানের বরণ পোষণ সব মিলিয়ে চরম অভাব অনটনের তাগিদে একদশক পূর্বে স্বামীর একমাত্র সম্বল ভিটেবাড়ি বিক্রি করে চলে আসেন বাবার বাড়ি ধূরুয়া গ্রামে।
মনোয়ারার কোন ভাই নেই তার তিন বোন বিয়ে হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়, সবাই মুটামুটি সুখী। একমাত্র মনোয়ারার এমন দৈন্যদশা। অন্য বোনেরা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। মনোয়ারা স্বামী সন্তানদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন বাবার নামে রেকর্ড থাকা ছয় শতক জমিতে।
মনোয়ারার দুই ছেলে এক মেয়ে, মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন,ছোট ছেলে বিয়ে করে সংসার পেতেছে শ্বশুর বাড়িতে। বড় ছেলে খুব সহজ সরল টাইপের বিয়েশাদী করে না মন চাইলে দিনমজুরের কাজ করে, মন না চাইলে করে না। থাকে মায়ের সাথে।
স্বামী মারা গেছে প্রায় ছ’বছর আগে।স্বামী থাকা অবস্থায় মনোয়ারা সংসার চালাতে শুরু করেন ভিক্ষা করা।এখনো চলমান রয়েছে ভিক্ষা করা।পরের বাড়িতে কাজ পেলে মাঝে মধ্যে কাজও করে সে। এভাবেই নানান জটিলতায় কোন মতে চলে যাচ্ছে তার জীবন।
বিধবা ভাতার আবেদন করছিল সে কিনেছিল সীমও। কিন্তু টাকার দেখা পাইনি। স্থানীয় এক নেত্রী আর ইউপি সদস্যদের বাড়িতে কতবার গেছে ভাতার টাকার খোঁজ নিতে, তার কোন হিসেব নেই ।অবশেষে প্রতিবেদকের সহযোগিতায় অন্য একটি সীমে চলে যাওয়া প্রথম দফার সারে চার হাজার টাকা ১৪ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়েছে মনোয়ারা। এতে সে যারপরনাই খুশি।
তার থাকার যে ঘরটি রয়েছে সেটির বেহাল দশা।বৃষ্টির পানি সূর্যের আলো চাঁদের আলো সব যায় তার ঘরে। তার ঘরটির বেড়ায় জুলানো রয়েছে নান্দাইল পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়ার নির্বাচনি প্যানাপক্স, মনোয়ারা বলেন বেড়া ভাঙা ছেলে কইথেকে যেন এনে দিয়েছে, চালের রয়েছে প্লাস্টিক চট দেওয়া। প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বললো “ভিক্ষা কইরা ভাত খাই ঘর বানবাম কিদেয়্যা”।
প্রতিবেশীরা জানান, বর্তমান সমাজে এমন পরিবার পাওয়া কঠিন, খুব কষ্টে দিন যায় পরিবারটির। বৃষ্টি এলে সবকিছু জড়ো করে ঘরের এক কোণে বসে থাকে মা-ছেলে।
প্রতিবেশী রাজু নামে একজন বলেন, যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে বা মনোয়ারা অসুস্থ থাকে কাজে বা ভিক্ষা করতে না যেতে পারে আমরা প্রতিবেশীরা সাধ্যমত যা দেই তাই খেয়ে পড়ে থাকে।আমরা এগিয়ে না আসলে তাদের উপোস থাকতে হয়। এই ঘর বাঁধবে কি দিয়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিম উদ্দিন জানান, বেশ কয়েকটি ঘরের তালিকা দেওয়া হয়েছে এখনও কোন বরাদ্দের খোঁজ খবর পাইনি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী মোঃ আবুল মনসুর জানান,ওই মহিলার সম্পর্কে আমি অবগত নই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply