1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

জাতীয়

শিরোনাম

সমবায় এবং বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

  • Update Time : শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩২৯ Time View
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকাকে কোনো ভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সমবায়ের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয় আর সঞ্চয়ের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয়ী মনোভাব। তাই সঞ্চয়ী প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে এলে অর্থনৈতিক ভিত্তি যে মজবুত হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মৌমাছির কথাই ধরা যাক। সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে পরিশ্রমী এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি সারা দিন ফুলে ফুলে বিচরণ করে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে। আবার অসময়ে সে মধু পান করে তারা জীবন ধারণ করে। সমবায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।

বাংলাদেশে সমবায়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গণমুখী সমবায়ের সূত্রপাত করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালিতে সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ বছরে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ৬৫ হাজার গ্রামে বিভিন্নমুখী সমবায় চালু করবে।’ এর ফলে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার সমবায় আন্দোলনকে জোরালো ও গণমুখী করার লক্ষ্যে কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে সার সরবরাহ, সহজ শর্তে ঋণদান, মৎস্য সরঞ্জাম আমদানি শুল্ক রহিত, মৎস্যজীবীদের জলমহল ইজারা প্রদান, তাঁতিদের উৎপাদিত সুতা হতে নির্দিষ্ট অংশ প্রদান, তাঁতশিল্প সরঞ্জাম আমদানিতে আইন প্রণয়ন, তাঁতিদের সহজ শর্তে ঋণদান প্রভৃতি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়।

আমরা জানি, সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ভারত অবিস্মরণীয় সফলতা অর্জন করেছে। জাপান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের রাষ্ট্রে সমবায়কে অর্থনীতির তৃতীয় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশেও সমবায়ের মাধ্যমে কল্যাণমুখী অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। কাজেই সমবায়কে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন এবং বিতরণ ক্ষেত্রে আশাতীত ফল পাওয়া এবং এর মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সমবায়ী অভিজ্ঞতাকে মডেল হিসেবে কাজে লাগালে দেশের প্রায় দুই লাখ সমবায় সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ৪ কোটি মানুষ এর সুফল পাবে।

সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি বলেছিলেন, আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন পেট ভরে খেতে পায়, পরনে কাপড় পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। আর এজন্যই তিনি জাতীয় সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদে সমবায়ের শক্তিতে দেশ গড়ার রোডম্যাপ এঁকেছিলেন। সেখানে উল্লেখ আছে, ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য তিনি সমবায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার পথনকশা হিসেবে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে দেশের উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালিসমূহের মালিকানার ক্ষেত্রে সমবায়ী মালিকানাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মালিকানা খাত হিসেবে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

কর্মসংস্থান ও বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে সমবায় এক বিশাল শক্তি। সারা পৃথিবীর যাবতীয় কৃষিপণ্যের অর্ধেক সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাত হয়। ভারতের দুগ্ধ সমবায় ১১ মিলিয়ন সদস্য নেটওয়ার্ক ২২টি রাজ্যে সমবায় ফেডারেশনের মাধ্যমে ২৮৫টি জেলার এক লাখের অধিক গ্রামের পণ্য বাজারজাত করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সমবায়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সমবায়ের সফল উদাহরণ বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশি মিল্ক ভিটা ৩ লাখের অধিক সমবায়ী দুগ্ধ উৎপাদনকারীর আয় ১০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার তরুণ বন্ধুদের উদ্যোগে ৩৫০ টাকার সমবায় সমিতি করে ৩৫ বছরে বাংলাদেশে কয়েক শ কোটি টাকার সফল সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কিংশুকের নাম সবারই জানা আছে।

আমরা দেখতে পাই, সমাজে শিক্ষার হার বাড়লেও বাড়েনি সমবায়ী শিক্ষা। তাই সমবায় সম্পর্কে অনেকের ধারণাই স্পষ্ট নয়। সমবায় সংগঠনে সকল সদস্যের সমান অধিকার। এখানে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই। সমবায়ে সদস্যরা পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্যে সমিতি গঠন করে। সংগঠনের সব সদস্যের একসঙ্গে সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, কেননা সদস্যরা একে অপরের মঙ্গলের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময় করে। সহযোগিতাভোগী ও সহযোগিতা প্রদানকারী উভয়ই সংগঠনের অভিন্ন অংশ; যার ফলে তাদের মাঝে স্বার্থের সংঘাত থাকে না। সকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি ও শক্তি একত্রিত করে একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোপরি সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। কাজেই সমবায়ী কার্যক্রমকে নীতিমালায় পরিচালনা করা গেলে সমবায়ে সমৃদ্ধি সম্ভব।

সমবায়ে বিশ্বের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ফ্রান্সের প্রতি ১০ জন কৃষকের ৯ জন সমবায়ী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের ২৫ ভাগ সমবায়ী। জাপানে ৯১ ভাগ কৃষক সমবায় সমিতির সদস্য। কৃষি সমবায়ীদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার। কোরিয়ায় ৯০ ভাগ কৃষক, ৭১ ভাগ মৎস্যজীবী সমবায়ী। নরওয়েবাসীর প্রতি তিনজনের একজন সমবায়ী এবং তাদের ৯৯ ভাগ ডেইরিপণ্য সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। সিঙ্গাপুরের ভোগ্যপণ্য বাজারের ৫৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সমবায়। যার বার্ষিক টার্নওভার ৭০০ মিলিয়ন ডলার। নিউজিল্যন্ডে জিডিপির ২২ ভাগ আসে সমবায় থেকে। সেখানে ডেইরি সামগ্রীর ৯৫ ভাগ সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। কুয়েতে খুচরা বাজারের ৮০ ভাগ সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভিয়েতনামে মোট জিডিপির ৮ দশমিক ৬ ভাগ আসে সমবায় থেকে। অতএব বিশ্ব সমবায়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক ও কৃষক সমবায় সমিতি অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শন ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন এবং দেশের সম্পদেও সুষম বণ্টন ও সদ্ব্যবহার করা। বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তারই উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবায় কাজে লাগাতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তবে সমবায়ী জাগরণের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়তে হলে দরকার সমবায়ী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং দশ বছর মেয়াদি বাস্তবায়ন পলিসি নির্ধারণ করা। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, সমবায় একটি মানবকল্যাণমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সমাজের গণমুখী সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সমবায়কে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের গুরুত্ব বোঝাতে বারবারই বলেছেন, সমবায় এমন একটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক আর্থসামাজিক উদ্যোগ, যার মধ্যে থাকে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা, ব্যাপক ও বহুমুখী উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ, সমিতির সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির প্রয়াস, সর্বোপরি সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধনের উপায়।

সমাজের সাধারণ, দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নের ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সমবায়কে নতুনরূপ দিয়েছেন আরেক বাঙালি ড. আখতার হামিদ খান। ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের এই মডেলটি তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন একটি মডেল, যে ধারণায় সমাজের মানুষ নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়কে পুঁজিতে পরিণত করে নিজেদের প্রয়োজনে বিনিয়োগ করতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, স্বাভাবিক নিয়ম হলো ধনী দেশ থেকে অর্থ আসবে গরিব দেশে; কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। নিউইয়র্ক টাইমস ‘রিভার্স ফরেন এইড’ শিরোনামে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, গরিব রাষ্ট্র থেকে ধনী রাষ্ট্রে অর্থ গমনের ধারাও বেশ বাড়ছে বলে জাতিসংঘ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। টাইমস উল্লেখ করেছে, বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্র সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকেও আমেরিকার মতো ধনী রাষ্ট্রে অর্থ যাচ্ছে। এই হলো বাস্তবতার চিত্র। সমবায়ী পদ্ধতিতে আমরা যদি শিল্প কারখানা গড়ে তুলি, দেশীয় উদ্যোক্তাদের যদি বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশ এবং সরকারি সহযোগিতা থাকে, তাহলে সমবায়ী পুঁজি, ব্যাংকের সুবিধা, সম্পদেও সঠিক ব্যবহার ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগ সব মিলিয়ে আর্থসামাজিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। বিদেশি বিনিয়োগ অবশ্যই থাকবে। পাশাপাশি আমরা আমাদের রিসোর্সগুলোকেও কাজে লাগাব।

সমবায় বাংলাদেশে কোনো নতুন ধারণা নয়। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সমবায়ের শতবর্ষ অতিক্রম হয়েছে। দেশে জাতীয়, কেন্দ্রীয়ও প্রাথমিক সমিতির সংখ্যা কমবেশি দুই লাখ। তারপরও তুলনামূলকভাবে সমবায়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। সমবায়ের মাধ্যমে বহু দেশ-জাতি তাদের ভাগ্যের চাকা, বহু মানুষ-গোষ্ঠী নিজের আর্থিক অবস্থার বিরাট উন্নত করতে পেরেছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে সুসংগঠিত উপায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও আমানতের সমন্বয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয়ের সমন্বয় করে বহুমুখী কর্মক্ষেত্র তথা রোজগারি ক্ষেত্র সৃষ্টি করে প্রতিটি পরিবারকে আর্থিক স্বাবলম্বীর পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এর ফলে পরিবারের উন্নয়ন ঘটবে। পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্প ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এর ফলে গ্রামের মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমবে। স্থানীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। মডেল গ্রাম হবে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মডেল প্রতিষ্ঠান হবে। সমাজে অপরাধপ্রবণতা, প্রতারণা, কলহ-বিভেদ কমে আসবে। সামাজিক পুঁজি বা সামাজিক শক্তি সুদৃঢ় হবে। এই ধারাবাহিকতার প্রতিফলন ঘটবে গ্রামে, শহরে, সমাজে ও রাষ্ট্রে। যেহেতু সমবায় বহুমুখী কার্যক্রম সেহেতু এর সুফলও আসবে বহুমাত্রিক। একতা, জাগরণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন, বিতরণ এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন সর্বোপরি দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হবে। আর এরই মাধ্যমে বাংলাদেশ এক দিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

লেখক : কৃষি-অর্থনীতি বিশ্লেষক
writetomukul36@gmail.com

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews