দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গ্রামে স্বামীসহ একই পরিবারের চার প্রতিবন্ধী নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মনিকা হাঁসদা নামে একটি আদিবাসি পরিবার। থাকেন ভাঙা ঘরে। অন্যের বাড়িতে ঝিঁ আর মাঠের জমিতে কাজ করে যা আয় হয় তাদিয়েই চলে মনিকার সংসার।
মনিকা হাঁসদা (৫৮) বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের রানীনগর আদিবাসি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাড়া পরিবারের লোক চারজন। পরিবার ছোট ছেলে স্যামসন (১৬), তার বড় সালমন সরেন (২০) মেয়ে এলেনোরা (২৭) এবং স্বামী মানুয়েল সরেন (৬৩)। বাবাসহ সন্তানেরা বামন প্রাকৃতিক। মানুয়েল সরেন নিজের হাত ও পা বিকল হয়েছে। কানে শুনতে পান না। মেয়ে এলেনোরা স্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না। সালমন সরেন একটু কথ ভালো বলতে পারলেও উচ্চতার কারণে কোথাও কাজ করতে পারেন না। একই অবস্থা স্যামসন সরেনেরও।
সরেজমিনে মনিকা হাসঁদার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, একটি মাত্র মাটির নড়বড়ে ভাঙা ঘর। ঘরের পশ্চিম পাশের একাংশে দেয়াল অতিবৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। টিনদিয়ে দেয়াল আটকানো হলেও মাটিরমেঝেতে একটি চটের বস্তার ওপর ছেড়া কাঁথায় ঘুমানোর জায়গা। বাঁশের কঞ্চিদিয়ে দরজা লাগানো থাকলেও সেটিও একটি দড়ি দিয়ে বাঁধা।
জানতে চাইলে মনিকা হাসঁদা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবন্ধী স্বামীও সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। থাকার জায়গা নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। মানুষের বাড়িতে এবং মাঠে কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারি না। এতো কষ্টের পরও সরকারি কোন সহযোগেতা পাই না। এ জীবন থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
মনিকা হাঁসদা বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে মনিকার থাকার জন্য ঘরটি করেদেন কারিতাস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এখন তারা আর খোঁজ নিচ্ছে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই পরিবারে ছোট ছেলেকে সম্প্রতি প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। পরিবারের অন্যদের তথ্য যাচাই করে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হবে।
বিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রাজুল ইসলাম বলেন, একই পরিবারের চার সদস্য প্রতিবন্ধীর আওতায় আসলে অবশ্যই তাদের ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, আসলেই এটি অমানবিক। তাদের বিষয়গুলো যাচাই করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ