1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

জাতীয়

শিরোনাম

দেশ দুধ-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে

  • Update Time : রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৮২ Time View

মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ; আর মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণের পথে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় দুধ ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে হাঁটছে সরকার। এই লক্ষ্যে দেশের ডেইরি ও পোলট্র্রি শিল্পকে দক্ষ ও টেকসই খাতে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি-উন্নয়ন (লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-এলডিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পেতে মার্কেট চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুধ ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পে মাংস উৎপাদনেও গুরুত্ব রয়েছে। দুধ উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাথমিকভাবে ৭০০ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুই দিন দুধ দেওয়া হবে। ৬ লাখ ২০ হাজার খামারিকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ডেইরি ও ২ লাখ পোলট্রি খামারি। থাকবে ৩৬০টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক। পশুদের জন্য ৪১৫ উপজেলায় ডায়াগনস্টিক ল্যাব নির্মাণ করা হবে। খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে তিনটি আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ এবং ২০টি জেলায় পর্যায়ক্রমে কসাইখানা নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে নারীর ক্ষমতায়ন করা হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রধান দুটি অভীষ্ট হচ্ছে—দারিদ্র্যের অবসান, ক্ষুধামুক্ত জাতি ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ১২তম। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি রয়েছে। প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে সরকার দেশের গবাদিপশু ও হাঁস, মুরগি উৎপাদন, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আওতায় ‘এলডিডিপি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা রয়েছে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বেশি। প্রকল্পটির কার্যক্রম চলছে পার্বত্য তিনটি জেলা ছাড়া ৪৬৫টি উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌর এলকায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারগুলোকে আধুনিক করা হবে। সাভারে লাইভস্টক প্রশিক্ষণ আধুনিক করা হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও কৃষকদের যুব উন্নয়ন ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড সংক্ষেপে বার্ডের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিদেশেও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। ভ্রাম্যমাণ ভ্যাটেরিনারি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকের পশুর চিকিৎসা দেওয়া হবে।

এছাড়া এই প্রকল্পে বিদেশ থেকে ভালো জাতের গরু আমদানি করা হবে। সরকারি ৯টি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলোকে আধুনিক সুযোগ সংবলিত করা হবে। আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল দেওয়া হবে। ৩০০ ভিলেজ মিল্ক কালেক্টিং সেন্টার করা হবে। যেখান থেকে খামারিরা দুধ বিক্রি এবং বড় কোম্পানিরা কিনতে পারে। ২০টি মিল্ক হাব নির্মাণ করা হবে। ১০টি এলাকায় কমিউনিটি বায়োগ্যাস নির্মাণ করা হবে। ডিজিস ম্যাপিং করা হবে। কোন এলাকার পশুর কোন রোগ বেশি হয়, সেগুলোর ডাটা সংগ্রহ করে ম্যাপে ঢুকানো হবে। ক্ষুরা রোগ ও পিপিআর রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পে ইউনিডু ও এফএও কাজ করবে।

আরো জানা গেছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে উপজেলা পর্যায়ে একজন করে প্রাণী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, প্রতি উপজেলায় দুজন করে ৯৩০ জনকে প্রাণিসম্পদ মাঠ সহকারী, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪ হাজার ২০০ জনকে লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (স্বেচ্ছাসেবী) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম মনিটরিং করতে সারা দেশে ২০ জন মনিটরিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৪ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবীকে একটি করে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। প্রাণী সম্প্রসারণ ও মনিটরিং কর্মকর্তাদের ৪৮৮টি মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে। খামারিদের প্রশিক্ষণের জন্য ২৩৮টি উপজেলা অফিসে প্রশিক্ষণ কক্ষ নির্মাণ চলমান রয়েছে। অধিদফতর ও প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের ১ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে নারীর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্যাটাগরিতে ৩০ শতাংশ নারী কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার মধ্যে খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। সারা দেশের ৪৬৫টি উপজেলার ৪ লাখ ২০ হাজার দুগ্ধ ও ২ লাখ পোলট্রি (সোনালি, ব্রয়লার, লেয়ার মুরগি ও হাঁস) খামারিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রকৃত খামারিদের সংখ্যা নির্ধারণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে প্রতিটি উপজেলায় একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত খামারিদের চিহ্নিত করে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুধ ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

তারা আরো বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ জাতের উৎপাদন বাড়ানো, প্রাণিজাত পণ্যের মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুুকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন এবং বেসরকারি উদোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো। সঠিকভাবে খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, প্রাণিস্বাস্থ্য এবং কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থানা উন্নতকরণের মাধ্যমে খামারি পর্যায়ে বিদ্যমান পশুর উৎপাদনশীলতা কমপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। ৫ হাজার ৫০০টি প্রাণিসম্পদ জাত পণ্য উৎপাদনকারী সমিতি (প্রোডিউসার অর্গানাইজেসন) (পিও) গঠনের মাধ্যমে পণ্যসংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিভাবে মার্কেট লিংকেজ এবং ভ্যালু চেইন সিস্টেম উন্নত করা। বিভিন্ন পলিসি প্রণয়নে, দক্ষতা অর্জনে, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লজিস্টিস সরবরাহের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ অধিদপতরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। নিরাপদ প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন এবং মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নতি করা। প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য উপযোগী একটি সক্রিয় পরিবেশ, আধুনিক জ্ঞান পশুবিমার উন্নয়নকরণের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন।

প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আবদুর রহিম বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন, উৎপাদক গ্রুপ প্রতিষ্ঠা ও মার্কেট লিংকেজ এবং ভ্যালুচেইন সৃষ্টি করা হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মিটিয়ে প্রাণিসম্পদকে একটি দক্ষ ও টেকসই খাতে রূপান্তর করাই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন, পাণিসম্পদ খাতে যাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে সে ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কৃষক ডেইরি ও পোলট্র্রি শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হবে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।

খামারিদের প্রণোদনার বিষয় জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, গাভীপ্রতি ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে গাভীর পাঁচ লিটার দুধ হতে হবে। ‘ঘি’র উৎপাদন উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গরুর দুধ খাওয়ানো হবে। অনেক সময়ে খামারিদের কম দামে দুধ বিক্রি করতে হয়। খামারিদের দুধ থেকে ‘ঘি’ তৈরির মেশিন দেওয়া হবে। যাতে ‘ঘি’ উৎপাদনের মাধ্যমে তারা ন্যায্যমূল্য পান। খামারিদের কাঁচাঘাসের প্রতি উৎসাহিত করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের আঙিনায় ঘাস চাষ করা হবে। প্রাণিসম্পদের বিমা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews