পঁচাত্তরে পনের আগস্টে স্বাধীনতার স্হপতি, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে সহ পরিবারে হত্যার সাথে সাথে বিশ্ব জিডিপি তে ধস নেমে ছিল। পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট শুধু জাতির পিতার পরিবারের জীবন গুলোকে স্তম্ভিত করে দেয়নি, স্তম্ভিত করে দিয়েছিল জাতির ভবিষৎ পরিকল্পনাকে এবং সোনার বাংলা স্বপ্নকে । বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল তাঁর নীতি, আদর্শ এবং মানবতার পক্ষে বলিষ্ট কন্ঠস্বরকে ।
‘৭৫ এর রক্তপিপাসু ঘাতকরা রক্তহলি খেলে তাদের অতৃপ্ত আত্বার শান্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেনি।সেদিন অবুঝ শিশু রাসেলকে বন্দুকের নল দিয়ে কুচিয়ে কুচিয়ে হত্যা করেছিল । রাসেল চিৎকার করে বলেছিল, আমাকে মেরো না । বঙ্গবন্ধুর পরিচয়ে বড় হবো না। তার আর্তনাথে হয়তোবা বাংলার আকাশ-বাতাস কম্পিত হয়েছিল কিন্তু পাষাণের মন গলাতে পারেনি । স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, ১৫ আগস্টের খুনীরা আর ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলাকারী একই সূত্রে গাঁথা তারা। তারা সময় এবং সুযোগের জন্য অভিযোজিত হয়ে কোন দল বা গোষ্ঠীর সাথে সুপ্ত অবস্হায় থাকে। তাদের লক্ষ অর্জিত স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করা।
আওয়ামীলীগ কিংবা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে তারা ধ্বংস করতে চায়। কারন তারা জানতো স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি অথবা আওয়ামীলীগ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধাপরাধী, ১৫ আগস্টের মতো নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার একদিন না, একদিন করবেই । তাই তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালায়। বহু বছর ঘাতকরা শীত নিদ্রায় ছিল । ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট জঙ্গিবাদী এবং ইসলাম ধর্মের লেবাসধারী মানুষগুলি ৬৪ টি জেলায় বোমা ফাটানোতে দেশের মানুষ শুধু বিস্মিত হয়নি ; ঘৃণার পাহাড় নিক্ষেপ করেছে জঙ্গিদের প্রতি । পৃ্থিবীর সবচেয়ে শান্তির ধর্ম ইসলাম। এই ধর্মের দোহাই দিয়ে যুবকদেরকে ধর্মান্ধ করে ধর্মের বারটা বাজাচ্ছে । সারা দেশে একযোগে একই সাথে বোমা ফাটিয়ে জঙ্গিদের পরিধি ও বিস্তৃতি জানাল দিল ।
বিশ্ববাসী দেখলো এইসব জঙ্গিদের জঙ্গিপনা। আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন তখন জঙ্গিবাদ এবং বিভিন্ন সন্ত্রাস বিরোধী সভা-সমাবেস করতেছিল । শীত নিদ্রায় থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীরা তাদের পশুত্বকে জাগ্রত করে জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে হাত মিলায় । তারা ১৫ আগস্টের মতো রক্তহলি খেলার জন্য মহা পরিকল্পনার জাল বিস্তার করেছিল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জাতিকে দিবে আরেক রক্তগঙ্গা উপহার। আর আওয়ামী লীগকে করবে নেতৃত্বশূন্য। লাশের উপর খুনীরা হুংকার দিবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে সম্প্রীতি ও মানবতাকে। দেশের মানচিত্র কলুসিত হবে তাদের অপবিত্র হস্ত যুগলে ।
২১ আগস্ট, অবশেষে তাদের সেই মহেদ্র ক্ষণের লাল সূর্য উদিত হলো। তাদের পরিকল্পনার জাল সূক্ষ্ম এবং সাবধানতার সহিত বিস্তৃতি করেছিল । তারা তিনটি দল হামলার জন্য গঠন করেছিল । প্রখম দল আক্রমনে ব্যর্থ হলে ২য় দল আক্রমনে যাবে, তারপর ৩য় দল । প্রথম দল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ছাদে অবস্হান করবে। ২য় দলটি গোলাপ শাহ্ মাজারের নিকটে । ৩য় দল থাকবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মঞ্চের কাছাকাছি । ট্রাকের উপর নির্মিত হলো সেই কালজয়ী মঞ্চ। নেতা-কর্মীরা সভাস্হলকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছিল।
বাংলার আকাশে গোধুলীর ছায়া পড়বে তার আগ মুহূর্তে, শেখ হাসিনার বক্তৃতায় শেষে বিকট শব্দে সভাস্থল কম্পিত হলো। দেহরক্ষী এবং নেতা-কর্মীরা মানব প্রাচীর তৈরী করে শেখ হাসিনাকে শেষ রক্ষা করলেন। দেহরক্ষী তার বক্ষকে রক্তস্নাত করে এবং অমূল্য জীবনকে উৎসর্গ করে জননেত্রীর জীবন বাঁচালেন । শ্রদ্ধা জানাই তাঁর কর্তব্য বোধকে । ২১ অাগস্ট গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের রাজপথ রক্তস্নান করেছিল । ড্রেনে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হতে থাকলো। একে একে ১৩টি গ্রেনেড ছুঁড়া হলো। মানুষের দেহের মাংস পিন্ডগুলো বাতাসে ভাসতে থাকলো। ছিন্ন-বিছিন্ন দেহগুলো নিথর হয়ে পড়ে ছিল । ২৪টি তরতাজা প্রাণকে সাদা কাপড়ে মুড়াতে হলো।
সাথে সাথে তাদের পরিবারের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা সবই রাজপথে সমাধিত হলো। ৫০০ মতো নারী- পুরুষ আহত হলেন। আই ভি রহমান, আদা চাচাসহ ২৪টি নিস্পাপ প্রাণের প্রদীপ নিভে গেল। আহতরা হাত-পা চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে পেয়েছে শুধু শরীরে স্প্রিন্টারের সংযোজন। যাঁরা মরে গেছেন স্প্রিন্টারের যন্ত্রনা থেকে বেঁচে গেছেন, আর যাঁরা আহত তারা মৃত্যু যন্ত্রনার স্বাদ পাচ্ছেন প্রতিমুহূর্তে।
চলবে ———–
Leave a Reply