1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ইসরায়েলের চার ব্যক্তি ও দুই সংস্থার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে: ড. বেনজীর আহমেদ তীব্র তাপপ্রবাহে সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নান্দইলে একরাতে ৫ গরু চুরি চরফ্যাসনের দুলারহাটে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ মানুষ, প্রতিবাদে মিছিল এবং মানববন্ধন হরিরামপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪, সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ চরফ্যাশনে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ উদ্বোধন তাসের খেলা – কবি মোঃ আবদুল মালেক নান্দাইলে দশদিন ব্যাপী গ্রাম ভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষনের শুভ উদ্বোধন ॥ নান্দাইলে প্রাণীসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালিত

জাতীয়

শিরোনাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে পদার্পণ

  • Update Time : বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০
  • ২৪৪ Time View

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য বাঙালি জাতির স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। ব্রিটিশ শাসকরাও বিভিন্নভাবে বাঙালিদের দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। যার ফলে জাতি হিসেবে বাঙালির উন্নতির ধারা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর পাশাপাশি বাঙালি সমাজের একটি অংশের শিক্ষিত হওয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। এই শিক্ষিত সমাজই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অনুভব করেন। এরপর নানা পটপরিবর্তনের মাধ্যমে জন্ম নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, একসময় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরেই বাঙালি জাতি লাভ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

বাঙালি জনগণের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ইংরেজ শাসনামলের শুরুর দিক থেকেই জোরদার হতে শুরু করে। ইতোপূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পূর্ববঙ্গে ছিল না। বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল নেতারা তাই দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বঙ্গভঙ্গ রদের পর এই দাবি আরো জোরদার হতে থাকে। বলা যেতে পারে, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ১৯২১ সালে শুরু হলেও এর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানার জন্য আমাদের আরেকটু পেছন ফিরে তাকাতে হয়।

বাঙালির আর সব অর্জনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিল। বাঙালি নাগরিক সমাজের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘ বোঝাপোড়ার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ রদের অল্প কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। সময়টি ছিল ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এই ঘোষণা পূর্ববাংলার মানুষের মধ্যে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, মননশীলতায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে বাঙালি শিক্ষিত সমাজ। ১৯১২ সালের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয় নাথান কমিশনের ওপর। ১৯১৩ সালে নাথান কমিশনের ইতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই রিপোর্টটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরো সুগম হয়। কিন্তু এর পরবর্তী বছরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পথে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই যুদ্ধ। তবে এতসব প্রতিকূলতার মাঝেও নাগরিক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ধাপ তৈরি হয়ে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০’ পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব সন্দেহের অবসান ঘটে। এই আইনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইনটির বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে প্রতিবাদী চেতনার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে। ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদ ভূমিকা রাখে ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামকে সংগঠিত করতে। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কার্জন হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায়। ভাষা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপদান করতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করে। ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই গৃহীত হয়। ভাষাশহীদ আবুল বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।

৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি যুক্ত। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। পুরো মার্চ মাসজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেই প্রথম আক্রমণ চালানো হয়। সংগ্রামী মনোভাবের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ধরে তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধেও যোগদান করে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বলা হয়ে থাকে, সাধারণত দেশ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতারই অংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বাঙালি ও বাঙালির ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। দেশের ইতিহাস, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনস্বীকার্য অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো প্রতি বছর দেশের সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তৈরি হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ছাত্র। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। বছরের পর বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের নেতৃত্বের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদবি থেকে শুরু করে শিক্ষা, শিল্প, অর্থনীতিসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবাধ বিচরণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখনো অবধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

এতসব গর্বের পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রতি বছর সাত হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, এর ফলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রতি বছরই সমস্যায় পড়তে হয়। তবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথে যথেষ্ট অগ্রগতিও চোখে পড়ার মতো। নতুন হলসহ আবাসিক হলগুলোর ভবন সম্প্রসারণে একটি মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে। গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সেশনজটের মুখোমুখি হতে হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডে আরো শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাইকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, গবেষণাকাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে এবং এ খাতে বাজেট বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা থেকে জোর গলায় বলাই যায়, এই সমস্যাগুলোও খুব দ্রুতই এ বিশ্ববিদ্যালয় কাটিয়ে উঠবে এবং নিজের গৌরবকে করবে আরো সুসংহত।

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দেশের এতসব অর্জনের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯৯ পেরিয়ে ১০০ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ দিন দিন দেশকে আরো সমৃদ্ধ করবে—প্রতিষ্ঠা দিবসে এটিই সবার প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যুরেন্স বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ishrakf1971@gmail.com

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized By BreakingNews