সত্যিকারের জ্ঞানী এবং শিক্ষিত তিনিই যিনি জানেন এবং মানেন। অর্থাৎ যিনি শিক্ষাকে শুধু জানা পর্যন্ত সীমিত না রেখে নিজের জীবনেও তা বাস্তবায়িত করেন, তার দ্বারা উপকৃত হয় দেশ ও মানুষ। কারো অর্জিত জ্ঞানের প্রভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন না হয়ে যদি অকল্যাণ ঘটে তবে তাকে আর যাই হোক, কখনোই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত বা জ্ঞানী বলা যায় না।
একজন ইঞ্জিনিয়ার বা আমলা যদি ঘুষ খাওয়ার জন্যে ফাইল আটকে রাখেন, টাকা খেয়ে অযোগ্য প্রার্থীকে টেন্ডার দেন, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে অবৈধ সুবিধা প্রদান করেন, অন্যায় দেখেও তা প্রতিরোধের চেষ্টা না করে প্রশ্রয় দেন, তখন তার অবস্থান একজন ধূর্ত প্রতারক বা শোষকের বা চেয়ে আলাদা কিছু নয়।
একজন ডাক্তার যদি শুধু কোম্পানির পয়সা নিয়েই ওষুধ লেখেন এবং টেস্ট দেওয়ার পিছনে কমিশনের লোভ থাকে, তবে তিনি যত বড় প্রফেসরই হোন না কেন, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন, লোকে তাকে কসাই বলতেই পারে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি প্রভাবশালী মহলকে খুশি করার জন্য অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেন, প্রকৃত জ্ঞান থেকে বিচ্যুত রেখে ছাত্রদের শুধু পাশ করানোর কাজেই ব্যস্ত থাকেন তখন ওই শিক্ষকের মেধা ও বুদ্ধিকে অর্থহীন বলে গালি দেয়াই যায়!
একজন পেশাদার বক্তা বা চিকিৎসক ধূমপানের কুফল নিয়ে বক্তৃতার পর নিজেই যখন ধূমপান করেন, তখন ধূমপানের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তার নীতিগতভাবেই আর থাকে না, এবং এটা তার নিজের সাথে নিজেরই করা হাস্যকর প্রতারণাও বটে!
কাজেই কেউ সার্টিফিকেটে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হলেই বা আপাত দৃষ্টিতে মেধাবী চৌকস বুদ্ধিজীবী হলেই, বা জ্ঞানের বুলি আওড়ালেই তাকে প্রকৃত জ্ঞানী বলা যায় না, যদি না তার আচরণে মানবিকতার বিকাশ ঘটে, যদি না তিনি সৎ ও নীতিবান হন, যদি না তিনি তার জ্ঞান মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেন। এদেরকে জ্ঞানী না বলে বড়জোর স্বার্থপর জ্ঞান ব্যবসায়ী বা জ্ঞান প্রতারক বলা যেতে পারে!
বিদ্বানের বিদ্যাগুলো প্রকৃত জ্ঞান হোক, কাজে লাগুক মানব কল্যাণে, এমনটাই আমার আমাদের প্রত্যাশা।
Leave a Reply