ছবি সংগৃহীত
জিএসএন ডেক্স:
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মিয়া (৩৪) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় উপজেলার ট্রমা জেনারেল হাসপাতালে ভুল এনেসথেসিয়া দেয়ায় অপারেশন টেবিলেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে।
জুয়েল মিয়া উপজেলার চন্ডিবের মধ্যপাড়া এলাকার হাজী আলাউদ্দিনের ছোট ছেলে। এঘটনায় শুক্রবার সকালে জুয়েল মিয়ার বড় ভাই মো. কামাল মিয়া বাদী হয়ে ট্রমা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ভৈরব থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার -৭ ( ৩০৪-খ-৩৪ দ:বি:) ধারায় একই উদ্দেশ্যে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে একটি মামলা রুজু করে ভৈরব থানা পুলিশ ।
সূত্র জানায়, রাত সাড়ে নয়টায় ভৈরবের স্থানীয় ট্রমা জেনারেল হাসপাতালে ভুল এনেসথেসিয়া দেয়ায় অপারেশন টেবিলেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার খবর পেয়ে রোগীর স্বজনসহ এলাকাবাসী হাসপাতাল ভাংচুরসহ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ ও হাসপাতাল মালিক মো. মোশারফ হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে ভৈরব থানার পুলিশ, র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ সময় খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা পর্যন্ত স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালটি অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রাত ২ টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর পুলিশ র্যাবের নজরদারিতে ডা.কামরুজ্জামান আজাদকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
রোগীর স্বজনদের দাবি ডা. ইমরান অপারেশনের সময় এনেসথেসিয়া দিতে ভুল করেছে। এছাড়াও এনেসথেসিয়া করার পূর্বে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে ভুল ঔষধ প্রয়োগ করার কারণে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
রোগীর বড় ভাই মো.কামাল মিয়া জানান, আমার ছোট ভাই জুয়েল দুই বছর পূর্বে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার হাতের কবজি ভেঙ্গে যায়। তার চিকিৎসার জন্য আহত অবস্থায় ভৈরব ট্রমা হাসপাতালে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ভাঙ্গা হাতের চিকিৎসা করানো হয়। সে সময় হাতের কবজিতে বড় একটি অপারেশন মাধ্যমে তার হাতে স্ক্রুসহ দুটি প্লেট প্রবেশ করায় চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদ। দুই বছর পর সে স্ক্রু ও প্লেট অপসারণের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। হঠাৎ রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওটি থেকে ডাক্তার বের হয়ে বলেন আপনাদের রোগীর একটু শ্বাস কষ্টে সমস্যা দেখা দিছে, উনাকে জরুরি ঢাকাতে আইসিইউ’তে নিতে হবে। এ কথা বলে তিনি আবার ওটিতে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাকে ও ছোট ভাইকে ডেকে নিয়ে বলেন আপনার ভাইয়ের কাজটা তো সুন্দরভাবে করলাম যখন বেডে নেব সে সময় শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেছে, সেটা আমরা ক্লিয়ার করতে পারছি না। এখন সেটা সমস্যা লাগছে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার ভাই কি আছে, নাকি মারা গেছে? তারপর আমি ওটিতে গিয়ে দেখি আমার ভাই টেবিলেই মারা গেছেন। ভুল ঔষধ দিয়ে তারা ভাইকে মেরেছে বলে তার অভিযোগ।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ মানবকণ্ঠকে জানান, সম্পূর্ণ অজ্ঞানে ঝুঁকি থাকায় রোগী জুয়েল মিয়াকে অপারেশনের সময় সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে রোগীর একটি পাশ অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। রোগীর আবদার ছিল, সে যেন কোনরকম টের বা খবর না পায় সেজন্য ঘুম পাড়াতে বলে। তার অনুরোধে অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইমরান তাকে ঘুমের ঔষধ দেন। এর ২০-২৫ মিনিটের মধ্য তার হাত থেকে সার্জারির মাধ্যমে স্ক্রুসহ দুটি প্লেট অপসারণ করা হয়। তারপর যখন অপারেশন শেষ করার সময় হঠাৎ করে রোগীর পেশার কমে যায় এবং তার হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তার পরপরই রোগী মৃত্যুবরণ করেন। রোগীর ভয়ের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভৈরব থানার ওসি মোখলেছুর রহমান জানান, ভুল চিকিৎসায় একজন রোগী মারা যাওয়ার ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পৌছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করে। হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে নিহতের বড় ভাই মো. কামাল মিয়া বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন । এ মামলার প্রধান আসামি চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।