জিএসএন ডেস্ক: মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের পর সোমবার দুপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র হলে পুলিশের উপস্থিতিতে তল্লাশী চালিয়েছে প্রশাসন। এসময় স্ব স্ব হল কতৃপক্ষ তল্লাশী কার্যক্রমে অংশ নেয়। তাদের সাথে জানা যায়, বহিরাগত শিক্ষর্থী, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এ তল্লাশী অভিযান। সোমবার দুপুর তিনটা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী সাদ্দাম হোসেন, লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ তল্লাশী অভিযান চলে।
এর আগে গতকাল রোববার মধ্যরাতে এক কর্মীকে মারধরকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে প্রায় ২০/২৫ জন নেতাকর্মী সাদ্দাম হোসেন হলের ২৩৫ নং কক্ষে যায়।
এসময় ছাত্রলীগের বিদ্রোহী এক গ্রুপের কর্মী মোশাররফ হোসেন নীলকে প্রোগ্রামে না আসার কারণ সহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা নীলকে হুমকি ধামকি দিলে সে (নীল) তার অন্যান্য নেতাকর্মীদের খবর দেয়।
পরে অপর পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সাদ্দাম হোসেন হলে আসলে তাদের সাথে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রুপ নেয়। এসময় সম্পাদক গ্রুপের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মারধরের শিকার হয়।
তবে মোশাররফ হোসেন নীলের দাবি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তাকে ও শিমুল নামের এক কর্মীকে মারধর করা হয়। পরে এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান নেয়। অপরদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা জিয়া মোড়ে অবস্থান নেয়।
এসময় উভয় গ্রুপের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহ পরষ্পরকে ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের ধাওয়া খেয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা পালিয়ে আবাসিক হলের ভিতরে অবস্থান নেয়।
ঘটনার একপর্যায়ে জিয়া মোড়সহ লালন শাহ হল ও জিয়া হলের সামনে সহ বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েকটি ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “আমরা সাংগঠনিক বিষয়ে কথা বলতে তার (নীল) রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিষয়টিকে অন্যদিকে মোড় দেয়। এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। ”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘আমরা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সুপারিশ ও প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা আলমগীর হোসেন আলো বলেন, ‘‘আমাদের দুই কর্মী নিজ কক্ষে খাওয়া-দাওয়া করছিলো। এসময় সাধারণ সম্পাদক তার নেতাকর্মীদের নিয়ে বিনা উষ্কানীতে তাকে মারধর করে। পরবর্তীতে আমাদের নেকাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শোকের মাসে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।”
এদিকে সোমবার সকাল থেকেই বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ক্যাম্পাসে মাইকিং করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সাথে সকল শিক্ষার্থীকে পরিচয়পত্র বহন করতে বলা হয়েছে।
এ ঘোষণা শেষের দুই ঘন্টা পরই তিন হলে তল্লাশী অভিযান চালায় প্রশাসন। তল্লাশী অভিযানে পুলিশের পক্ষ উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আবাসিক হলে অভিযান চালানোর কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘’আমরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছিলাম। এ অভিযান মাঝে মধ্যেই চলতে থাকবে। তবে তিন হলে অভিযানে কিছুই পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।”
Leave a Reply