চলমান বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রতি মুহূর্তে বন্যার্তদের খোঁজ-খবর রাখছি। এবার সমন্বিত কাজের ফলে বন্যার ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি এবং সফলভাবে বন্যা মোকাবেলা করতে পেরেছি।’
বন্যা মোকাবেলায় সরকার সতর্ক আছে এবং প্রত্যেক জেলায় পর্যপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল জানান, ৭৫ জনের মধ্যে পানিতে ডুবে ৬৭ জন এবং নৌকা ডুবে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ জন বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন, ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩২ জন হয়েছেন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যায় ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মৃতের সংখ্যা শতাধিক।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিব বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে যে হিসাব পাওয়া গেছে তাই এখানে দেওয়া হয়েছে।
অনেকে ত্রাণ পাচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সচিব শাহ কামাল বলেন, “দেশের ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। ওই ২২ শতাংশ ত্রাণ পেতে পারে। সেই হিসেবে দেখুন আমাদের দেওয়া ত্রাণ পর্যাপ্ত কিনা। কোথায় ত্রাণ পাচ্ছে না- তা সুনির্দিষ্টভাবে বললে আমরা সেখানে ব্যবস্থা নেব।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৭ জুলাই পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩৫০ টন চাল, ৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩৯০০ বান্ডেল ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে।
এছাড়া এক কোটি ১৭ লাখ টাকা গৃহ মঞ্জুরী, এক লাখ ১৩ হাজার কার্টন শুকনো ও অন্যান্য খাবার, শিশু খাদ্য কেনার জন্য ১৮ লাখ টাকা, গো খাদ্যের জন্য ২৪ লাখ টাকা এবং আট হাজার ৫০০ তাঁবু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যায় ২৮ জেলার ১৬৩ উপজেলা, ৪৯ পৌরসভা, ৯৬১ ইউনিয়ন এবং ৬ হাজার ৫৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৮ ঘরবাড়ি, এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত বন্যায়; মারা গেছে ৪৫টি গবাদিপশু, ২২ হাজার ৩৩৯ হাঁস-মুরগী।
এছাড়া ৪ হাজার ৯৩৯টি শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ৭ হাজার ২৭ কিলোমিটার সড়ক, ২৯৭টি ব্রিজ বা কালভার্ট, ৪৫৯ কিলোমিটারে বাঁধ, ৬০ হাজার ২৮৯টি টিউবয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বন্যা দীর্ঘায়িত হবে না। পানি দুয়েক দিনের মধ্যে কমে যাবে। বন্যা দীর্ঘমেয়াদী হলেও ত্রাণের কোনো সমস্যা হবে না।”
দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি শনিবার থেকে হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, গত সপ্তাহের শেষ থেকে সারাদেশে এবং দেশের উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। এই মুহূর্তে সব জায়গায় পানি হ্রাস পাচ্ছে।
আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব পয়েন্টে পানি নামতে শুরু করবে আশা প্রকাশ করে আরিফুজ্জামান বলেন, যেসব জায়গা বেশি উপদ্রুত ছিল যেমন- জামালপুর, গাইবান্ধায় অনেক ভিতরে পানি ঢুকে গেছে, সেসব জায়গা থেকে পানি নামতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
“এই সপ্তাহে দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এবং আগামী সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টিপাতের লক্ষণ নেই। নদ-নদীর পানি এখন হ্রাস পাচ্ছে, আগামী দুই সপ্তাহ তা অব্যাহত থাকবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় বন্যার ঝুঁকি দেশে নেই।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, আগামী ১০ দিন ভারতীয় অংশে বাংলাদেশের উজানে বিশেষ করে নেপাল, আসাম, মিজোরাম এবং মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। তবে হালকা ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। একই সাথে বাংলাদেশেরও বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত হবে।
সূত্র: বিডি নিউজ
Leave a Reply