1. admin@www.gsnnews24.com : admin : সাহিত্য বিভাগ
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

কে এই ‘পাগলা মিজান’? দেশ ছেড়ে পালানোর সময় ব্যারের হাতে আটক

  • Update Time : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৭৪ Time View

জিএসএন ডেস্ক: দেশ ছেড়ে পালানোর সময় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন হাবিবুর রহমান মিজান। মোহাম্মদ থানা আওয়ামী লীগের এই নেতা স্থানীয়দের কাছে পাগলা মিজান নামে পরিচিত পরিচিত। তিনি মোহাম্মদপুরবাসীর ত্রাস।

স্থানীয়দের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গুহ রোডের হামিদা আবাসিক গেস্ট হাউজের সামনে থেকে পাগলা মিজানকে আটক করে। র‍্যাব জানিয়েছে, তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

পাগলা মিজান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মিজান মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। হত্যা, মাদকের কারবার,চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম।

দুর্নীতি-সন্ত্রাস-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন মিজান। দেশ ছাড়ার উদ্দেশে চলে যান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের গুহ রোড এলাকায়। কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় মিজানের আনাগোনা দেখেছেন অনেকে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যে হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন ক্ষমতাসীন দলের নেতা মিজান। গত সোমবার রাতে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদপুর এলাকায় জমিদখল, টেন্ডারবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। তিনি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে তটস্ত থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাগলা মিজান আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি দল পাল্টে রাতারাতি বনে যান ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতায়। পরে নেতাদের আশীর্বাদে মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। মাদক কারবার থেকে শুরু করে খুন-খারাবি পর্যন্ত নানা অপরাধমূলক কাণ্ডে তার নাম উঠে এসেছে বারবার।

মহাজোট সরকারের আমলে মিজান বাহিনী ৩০০-৪০০ কোটি টাকার শুধু টেন্ডারবাজিই করেছে। এ ছাড়া ভূমিদখল, চাঁদাবাজিসহ মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে মাদক ও চোরাই গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ মিজানের হাতে। স্থানীয় লোকজন বলেন, খুন-খারাবি পাগলা মিজানের বাঁ হাতের কাজ। এ কারণে এলাকায় কেউ তার ভয়ে কথা বলেন না।

২০১৪ সালে মোহাম্মদপুর এলাকায় ৬৫ বছরের বৃদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ পাইন ও তার অসুস্থ স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে তুচ্ছ ঘটনায় শত শত মানুষের সামনে জুতাপেটা করেন এই পাগলা মিজান। কেউ ভয়ে কথা বলেননি। ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা তার অপকর্মে সহযোগিতা করেন। এ কারণে অপরাধ করেও তিনি পার পেয়ে যান।

মোহাম্মদপুরের অনেকে এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে চেনেন ‘পাগলা মিজান’ হিসেবে। কথিত আছে, কয়েক দশক আগে একবার পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমেছিলেন মিজান। পরে গ্রেফতার এড়াতে পরনের পোশাক খুলে রেখে তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেন, সেই থেকে তার ওই নাম।

অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে তার বাসায় হামলা করেছিল যারা, সেই দলেরও একজন তিনি। অথচ সময়ের স্রোতে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। ভোল পাল্টে গেছে তার, পাল্টে গেছে নামটি পর্যন্ত।

তিনি এখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা; রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেছেন অপরাধ সাম্রাজ্য। মাদক কারবার থেকে শুরু করে খুন-খারাবি পর্যন্ত নানা অপরাধমূলক কাণ্ডে তার নাম উঠে এসেছে বারবার।

সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিজান ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর এলাকায় শুরু করেন চাঁদাবাজি, ছিনতাই। ছিনতাইকারী হিসেবেই ১৯৭৪/৭৫ সালে তার বিশেষ পরিচিতি আসে। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি খামারবাড়ী খেজুরবাগান এলাকায় ছিনতাই করার সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লালমাটিয়ায় মসজিদের পাশে পুকুরে নেমে পড়েন।

পুলিশ তাকে বারবার নির্দেশ দিলেও তিনি পুকুর থেকে ওঠেননি। ৪-৫ ঘণ্টা পর তিনি পরনের কাপড় ছাড়াই উঠে আসেন। এমন আচরণে পুলিশ তাকে পাগল বলে ছেড়ে দেয়। তখন থেকেই এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পাগলা মিজান নামে।

চলমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের শুরুতে একাধিক খুনের মামলা কাঁধে নিয়েও কিছুদিন তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। তার নামে মোহাম্মদপুর থানায় ১৯৯৬ সালে ইউনূস হত্যা, ২০১৬ সালে সাভার থানায় জোড়া হত্যা মামলা রয়েছে। গত সপ্তাহে জমি দখলকে কেন্দ্র করে এক দল সন্ত্রাসী একটি রিয়েল এস্টেটের ছয় কর্মীকে গুলি এবং আরও ১৪ জনকে কুপিয়ে জখম করে।

এ সময় সন্ত্রাসীরা জুয়েল নামের একজনকে হত্যা করে লাশ তুরাগে ফেলে দেয়। এ হত্যাকাণ্ডেও হাবিবুর রহমান মিজানের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে ক্যাম্পবাসীর সংঘর্ষের নেপথ্যেও উঠে এসেছে তার নাম।

জানা গেছে, মিজান ক্যাম্পের বিদ্যুৎ লাইন থেকে ক্যাম্প-লাগোয়া কাঁচাবাজার ও মাছের বাজারের তিন শতাধিক দোকানে অবৈধ সংযোগ দিয়ে মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় করতেন। এ কারণেই বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে ক্যাম্পবাসীর ঝামেলার সূত্রপাত।

মাদক কারবার থেকে শুরু করে খুনখারাবি পর্যন্ত নানা অপরাধে বারবার উঠে এসেছে এই মিজানের নাম। কয়েকবার জেলে গেলেও অল্প সময়েই ফের বেরিয়ে এসে ‘হাল ধরেছেন’ নিজের অপরাধ সাম্রাজ্যের। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন।

সম্প্রতি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে মিজানের সম্পর্কের কথা। জানতে পারেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তার অফিসে মিজান নিয়মিত অবস্থান করেন। বিষয়টি তাঁরা সরকারের উচ্চ মহলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এরপর গা ঢাকা দেন মিজান। আজ তাকে গ্রেফতার করা হল।

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023
Theme Customized By BreakingNews