স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার যুবলীগ নেতা জসিম মিয়া (৩২) এলাকাবাসীর কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। মাদক কারবার, হত্যার হুমকি, নারী নির্যাতন, জমি দখলসহ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। স্বল্প সময়ে একজন সাধারণ যুবক থেকে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। সম্প্রতি জসিমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বেয়াই ও একজন মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর এখনো তিনি অধরা।
স্থানীয়রা জানায়, জসিম মিয়া উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর বনগাঁও গ্রামের মৃত রুস্তুম আলীর ছেলে। কয়েক বছর আগেও তাঁর আয়-রোজগারের কোনো পথ ছিল না। বড় ভাই আলমগীর হোসেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি জসিমও হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। দখলবাজির মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর নামে ১৫-১৬টি মামলা রয়েছে। কয়েকটিতে তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে মামলার বাদীদের মারধরের পর হত্যার হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন। গত ৫ জুন জসিম তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজের কাছে বসবাসরত আব্দুস ছালাম ভূঁইয়া নামের এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের মারধর ও লুটপাট করেন। একই দিন আরেক মুক্তিযোদ্ধা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি কমান্ডার তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার (রাষ্ট্রপতির বেয়াই) বসতবাড়িতে একই কায়দায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। দুটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে এলাকা ছাড়েন জসিম মিয়া। এর পর থেকেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। তারা জসিমকে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
গত ২০ জুলাই জসিমের নামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিত নির্দেশ দেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার আঠারবাড়ী গ্রামের প্রশান্ত সরকারের পুকুর দখল করে অর্ধকোটি টাকার মাছ লুট করেছেন জসিম। উত্তর বনগাঁও গ্রামের সাগর মিয়ার স্ত্রী ফেরদৌস আরা বেগমের দুই শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। তেলোয়ারি গ্রামের জোবায়ের আহম্মেদ সানির ১০ শতাংশ জমি দখল করে টিনশেড ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় ওমর সানি নামের এক যুবকের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করেছেন।
অন্যদিকে তেলোয়ারি গ্রামের মোজাম্মেল মিয়ার কাছ থেকে এক লাখ টাকা, তাঁর ভাই ছাইদুর রহমানের কাছ থেকে এক লাখ টাকা, বিষপুর গ্রামের ফজলু মিয়ার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, শ্রীফলতলা গ্রামের আবু তাহেরের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা, মরিচপুর গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, কামাল মিয়ার কাছ থেকে এক লাখ টাকাসহ অনেকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বদরুল আলম লিটন দীর্ঘদিন ধরে কেবল ব্যবসা করে আসছিলেন। অস্ত্রের মুখে জসিম তাঁর ব্যবসা দখলে নিয়ে নিজেই তা চালিয়ে আসছেন।
তেলোয়ারি গ্রামের জোবায়ের আকন্দ সানি বলেন, এলাকার উত্তর বনগাঁও গ্রামে তাঁর সাত কাঠা জমি আছে। সেখানে প্রায় ১০ শতাংশ জমি দখল করে টিনশেড ঘর তোলেন জসিম। বাধা দিতে গেলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
শ্রীফলতলা গ্রামের ওমর সানি বলেন, তাঁর জমি দখলে নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন জসিম। এ ছাড়া বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিতে চাইলে গুলি করে মারার হুমকি দেন। ভয়ে টাকা পরিশোধ করে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিমের ফোন নম্বরে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে আরেক ভাই মহিউদ্দিন বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আহম্মেদ কবির জানান, জসিমের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা ছাড়াও ডিশ ব্যবসা দখলের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার নামে করা বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। তাকে ধরতে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা মাঠে তৎপর রয়েছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ
Leave a Reply