গত ৯ জানুয়ারি, শামীম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত আবেদন পাঠিয়ে এই দাবি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী, তবে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করি। এর আগে জামালপুরে লেখাপড়া করার সময় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম।’
এছাড়া, শামীম তার অভিযোগে দাবি করেন যে, ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে তাকে হেনস্তা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে শহীদ সাগর হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় জড়ানো হয়েছে, যদিও মামলার বাদী জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছেন যে আমি ওই মামলার সন্দেহভাজন আসামি নই।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর সেই আবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এখন আলোচনার ঝড় বইছে রাজনীতির মহলে।
তার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আর বিএনপি নেতারা বলেছেন, হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে নাটক তৈরি করছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
শামীমের ছাত্রদলের রাজনীতি সম্পর্কে জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন বলেন, ‘আমিনুল হক শামীম জামালপুরের আশিক মাহমুদ কলেজে পড়াশোনা করেছেন, তবে তার ছাত্রদলে পদ-পদবির সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন এবং ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।’
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আমিনুল হক শামীম এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে বিগত কয়েক বছর আগে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। তখন সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের আসামি করে ময়মনসিংহ আদালতে মামলা করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে অবশ্য ওই মামলাটি আপস মীমাংসা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, এ ধরনের হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশরাই আজ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছে। তারা আওয়ামী লীগের পদ পদবি নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লাভবান হয়েছেন। তাদের মত অনুপ্রবেশধারীর কারণে ত্যাগী নেতারা আওয়ামী লীগে ভিড়তে পারেননি। আওয়ামী লীগ আমলে সব সুবিধাও নিয়েছেন, আর এখন বাঁচার জন্য নানা ইতিহাস টানছেন। এ সব নেতাদের দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান তারা।
কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমিনুল হকের বিরুদ্ধে সাগর হত্যাসহ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এছাড়া তিনি একাধিক মামলার সন্দেহভাজন আসামি। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে।’
ময়মনসিংহ রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ড. মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ওই আওয়ামী লীগ নেতা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত করছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ নানা অপকর্মের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’
আমিনুল হক শামীম ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি। এছাড়াও তিনি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান সভাপতি। এর পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি। গত সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
Leave a Reply