সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কেন্দুয়া সরকারি কলেজ (ডিগ্রী কলেজের) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ নিয়ে চলছে নানা রকম নাটকীয়তা। মঙ্গলবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (জেষ্ঠ শিক্ষক) মো: শফিউল আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-১ মুহাম্মদ শফিউল বশর স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার ওই দিনই বিকালেই অদৃশ্য কারণে তার স্বাক্ষরিত অপর একটি পত্রে এ নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ নাটকের শিকার হচ্ছেন ৭৯ শিক্ষক কর্মচারী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী ও এক শিক্ষক বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কি দোষ? আমরা তো বেতনভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
জানা যায়, কেন্দুয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম কুমার কর নিয়ম মোতাবেক কয়েকমাস আগে অবসরে যান। তাঁর স্থলে জেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান মো: জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার। তিনিও গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। অভিযোগ রয়েছে এক মাস আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর কথা থাকলেও তিনি অবসরে যাওয়ার দুই দিন আগে ৭ জন শিক্ষকের একটি তালিকা পাঠান। এতে মো: শফিউল আলমকে জেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে এক নাম্বারে নাম লিপিবদ্ধ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষদের মধ্যে ২/৩টি ভাগ হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা মো: শফিউল আলমে। সে প্রেক্ষিতে বিধিমোতাবেক গত ৪ ফেব্রুয়ারী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-১ মুহাম্মদ শফিউল বশর মো: শফিউল আলমকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই দিন বিকালেই তার স্বাক্ষরিত অপর একটি পত্রে মো: শফিউল আলমের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পরলে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এক ছাত্র অভিভাবক বলেন, এটি এখন নামেই একটি কলেজ। ছাত্র-ছাত্রীদের কোন কাশ নেই, শিক্ষকদের মধ্যে নেই কোন শৃঙ্খলা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় কান্ডারী বিহীন তরীর মতোই চলছে কেন্দুয়া সরকারি কলেজ।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, মো: শফিউল আলমের নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হলে একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় কতিপয় শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-১ এর নিকট বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা অন্য একজন জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান, তবে দাবির মুখে সহকারী পরিচালক নতুন কোন শিক্ষককে নিয়োগ না দিয়ে মো: শফিউল আলমের নিয়োগ বাতিল করে দেন। এ ব্যাপারে সহাকারী পরিচালক মুহাম্মদ শফিউল বশরের অফিসের নাম্বারে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী অধ্যাপক মো: শফিউল আলমের সাথে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সহাকারী পরিচালক কলেজ-১ মুহাম্মদ শফিউল বশর স্বাক্ষরিত এক পত্রে আমাকে বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিকেলেই আবার কেন আমার নিয়োগ বাতিল করা হয়, তা আমি জানি না। কিজন্য করা হয় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন। যেহেতু সেখান থেকে বাতিল করা হয়েছে কেন বাতিল করা হয়েছে তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদারের সাথে দেরিতে কেন শিক্ষদের তালিকা পাঠিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দেরিতে পাঠাইনি, সময়মতই পাঠিয়েছি।
Leave a Reply