
অনলাইন ডেস্ক: কাজের প্রলোভনে বাংলাদেশিদের রাশিয়ার যুদ্ধে মানব পাচার চক্রের মূল হোতা তামান্না জেরিনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নেপালে পালানোর উদ্দেশ্যে তিনি বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন। তামান্না জেরিনের নামে বনানী থানায় মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তার পাঠানো লোকজনকেই রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিপক্ষে যুদ্ধে নামানো হতো।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকার বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘রাশিয়ায় যুদ্ধে আট বাংলাদেশি!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি তুমুল আলোড়ন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মালী ও বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে রাশিয়া নিয়ে গিয়ে জোর করে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের। এমন অন্তত ১০ ভুক্তভোগীর সন্ধান পায় প্রতিবেদক।
এদের মধ্যে যুদ্ধে গিয়ে ‘মাইন বিস্ফোরণে’ আহত এক যুবকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
‘রাশিয়ায় যুদ্ধে আট বাংলাদেশি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। এসব অভিযোগের তথ্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধান বিভাগ যাচাই-বাছাই করে ছয় জেলার অন্তত ১৮ জন যুদ্ধদাসের বিস্তারিত তথ্য পায়।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলে প্রতিবেদকের।
যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইউরোপের স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিরা কিভাবে রাশিয়ায় বিক্রি হয়ে যুদ্ধদাসের জীবন বরণ করে নিয়েছেন, তা সবিস্তারে উঠে এসেছে সবার বক্তব্যে।
তাঁদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ধরনের ফাঁদ পেতেছে ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করছেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে দেশ থেকে নিরীহ ব্যক্তিদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে যুদ্ধদাস বানানোর কারিগর এম এম আবুল হাসান। ইউরোপের উন্নত দেশে নির্ভার জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে মূলত টাকার কল খুলে বসেন পতিত আওয়ামী লীগের এই নেতা। মানুষ বেচে তিনি বনে গেছেন অঢেল সম্পদের মালিক। নড়াইলের কালিয়ায় বানিয়েছেন তিনতলা অট্টালিকা। ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোটি টাকা ঢেলেছেন। এলাকার মানুষের কাছে ‘দানবীর’ পরিচিতি পাওয়া হাসান মূলত রাশিয়ায় মানবপাচারের মূল হোতা।
মানবপাচারের অপকর্মে হাসানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন সাবিয়া তামান্না জেরিন। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর মরজাল মধ্যপাড়া গ্রামে। তিনিও রাশিয়ায় যুদ্ধদাস বানানোর অন্যতম কারিগর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের বাসস্ট্যান্ডে একটি ইলেকট্রনিকের দোকান ও বসতঘরের পেছনে একটি মুরগির ফার্ম চালাতেন মানবপাচারচক্রের সদস্য নাজমুল হাসান তুহিন। তিনি ড্রিম হোম ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবিয়া তামান্না জেরিনের ভাই। এই তুহিনকে সামনে রেখেই প্রতারণার জাল বোনেন তিনি। পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর বিভিন্ন যুবককে ইউরোপের পরিবর্তে রাশিয়ায় যেতে প্ররোচিত করে জেরিন। রাশিয়ায় যুদ্ধদাসে পরিণত হওয়া বিভিন্ন ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র: কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply